আমাদের বাণী ডেস্ক; ঢাকা;  উন্নত জাতি গঠনের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য রেখে উন্নত জাতি কল্পনা করা যায় না। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য থাকার কারণে আজ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে শিক্ষক অসন্তোষ। গত কিছু দিন আগে নন এমপিও শিক্ষকরা এমপিও পাবার জন্য বেশ কিছু দিন রাস্তার অবস্থান করে। এতে লেখা পড়ার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এবতেদায়ী শিক্ষকরা জাতীয়করণের জন্য এখন রাস্তায় অবস্থান করতেছে । এটা ডিজিটাল যুগে বেমানান। ২০১৮ সালে জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকরা ১৯ দিন রাস্তায় অবস্থান করেছিল এতে লেখা পড়ার ক্ষতি হয়নি? এ ক্ষতির কারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য।

২০১৫ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় শিক্ষকরা পাবে ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতা। সরকারি শিক্ষকরা ঠিকই পেয়েছিল সঠিক সময়ে অপর দিকে বেসরকারি শিক্ষকরা তা আন্দোলনের মাধ্যমে পেয়েছে তিন বছর পর যা আবার বকেয়া বিহীন। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ঈদ বোনাসের মধ্যে ও পার্থক্য ব্যাপক।

বাড়ি ভাড়া সরকারি শিক্ষকরা পায় ৪৫-৬০% আর বেসরকারি শিক্ষকরা তা পায় মাত্র ১০০০ টাকা। চিকিৎসা ভাতা সরকারি শিক্ষকরা পায় ১৫০০ টাকা আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় ৫০০ টাকা। ঈদের বোনাস সরকারি শিক্ষকরা পায় ১০০% আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় মাত্র ২৫%। স্বল্প সুদে হাউজ লোন পায় সরকারি শিক্ষকরা অপর পক্ষে বেসরকারি শিক্ষকরা তা থেকেও বঞ্চিত। বেসরকারি শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের মত নয় ।

বেসরকারি শিক্ষকরা শুধু শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করে বদলি হতে পারবে কিন্তু সেই নিয়োগ দিবে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি। তাহলে সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য রয়েই গেল। সরকারি যেমন এক জনকে বদলি করে আরেক জনকে আনা যায় বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায় তা করা হবে না।শুধু শূন্য পদের বিপরীতে নেওয়া হবে।

এই বৈষম্য কারোর কাম্য হতে পারে না। সরকারি শিক্ষকরা পান বেতন আর বেসরকারি শিক্ষকরা পান অনুদান বা সরকারি অংশ এটা সৎ মায়ের মত আচরণ নয় কি? এটাও একটি চরম বৈষম্য নয় কি? লেখা পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য চাই সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন। শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে হয় বৈষম্য দূর করার জন্য এর কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে যা কখনো কোনো উন্নত দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না।শিক্ষকরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় অবস্থান করতে হয় । এটা বড়ই দুঃখের বিষয় যা পৃথিবীর কোনো দেশে এ অবস্থা দেখা যায় না।যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশেই শিক্ষকদের দেওয়া হয় সর্বোচ্চ মর্যাদা।

আর বাংলাদেশে শিক্ষকরা অবহেলিত বৈষম্যের যাঁতাকলে পড়ে। সরকারি এবং বেসরকারি এই দুই ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের শিক্ষকরা যা বিশ্বের কোথাও নেই।আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষক সবার মর্যাদা তাই সমান চাই। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা শিক্ষার্থীর জন্য কল্যান কর নয়। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে পাঠদান থেকে এতে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। পরিণতিতে দেখা যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়।
শিক্ষকরা হারাচ্ছে পাঠদানের প্রতি মনোযোগ।

পেটে ক্ষুধা নিয়ে কোনো কাজই সুষ্ঠু ভাবে করা যায় না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আনতে তাই জাতীয়করণ অপরিহার্য। বৈষম্য দূরীকরণ না হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে না। দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অকালেই তারা ঝরে পড়চ্ছে।লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। যা ডিজিটাল যুগে সত্যিই কাম্য নয়। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন হলে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত সকলেই সমান সুযোগ পাবে এবং শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আর এই উন্নয়নশীল দেশ গঠনের পূর্ব শর্ত বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা।

জাতীয়করনই তাই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। জাতীয়করণ হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে এবং আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কারণ শিক্ষিত জাতিই আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে পারে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করলে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের প্রতি মনোযোগী হবে এবং শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে যা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল জনক। জাতীয়করণ হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে এবং প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে। দেশ হবে একটি উন্নয়নশীল দেশ।জাতীয়করণ হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে সিন্ডিকেট দূর হবে এবং কোচিং বানিজ্য বন্ধ হবে। যা প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় খুবই জরুরি। জাতীয়করণ হলে সকল পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করার সমান সুযোগ পাবে এবং শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠবে।

দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে দেশ মুক্তি লাভ করবে। জাতীয়করণ হলে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর হবে এবং শিক্ষকরা পাঠদানের প্রতি বেশি মনযোগী হবে। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্যের প্রয়োজন হবে না। তখন শিক্ষকদের পিছু টান থাকবে না
অবিভাবকের সচেতনা বৃদ্ধি পাবে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিবে। প্রকৃত শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে। মেধাবী শিক্ষার্থীর হার বেড়ে যাবে। দেশ উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে যাবে। নতুন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।বেকারত্বের হার কমবে। কোচিং বানিজ্য চিরতরে বন্ধ হবে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণী পাঠদানের প্রতি মনোযোগী হবে। সরকারি এবং বেসরকারির মধ্যে সকল বৈষম্য দূর হবে। সর্বোপরি এক কথায় বলা যায় জাতীয়করনই সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, আপনি বেসরকারি শিক্ষকদের প্রানের দাবি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন করে। বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিন। জাতি আপনার এই অবদান স্মরণে রাখবে চিরকাল।

মোঃ আবুল হোসেন, লেখক ও শিক্ষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।