পুরো নাম ইসরাত জাহান প্রমি। পড়াশোনা করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে। দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় পেয়েছেন উচ্চমানের আন্তর্জাতিক ভেটেরিনারি শিক্ষাবৃত্তি।

বাংলাদেশ থেকে একমাত্র প্রমি প্রথমবার এমএসডি এনিম্যাল হেলথ এবং ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রদানকৃত ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট স্কলারশিপ-২০১৮ এর মনোনীত হলেন। তৃতীয় বারের মত প্রদানকৃত এ বৃত্তির জন্য সারা বিশ্বের ৩০ টি দেশের ৪১ জন শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হয়। এশিয়া থেকে মনোনীত সেরা চারজনের একজন বাংলাদেশের প্রমি।

বিশ্বব্যাপী ভেটেরিনারিয়ানদের যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৮ সালে এ বৃত্তির জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে বিশ্বের ৫০ টির অধিক দেশ থেকে আবেদনপত্র জমা পড়ে। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল কোস্টারিকা’র সান জোসে অনুষ্ঠিত ৩৫ তম ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি কনগ্রেসে মনোনীতদের তালিকা ঘোষণা করা হয়। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়তে মনোনীত প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাবে ৫ হাজার ডলার।

প্রমির জন্মস্থান কুমিল্লার মুরাদ নগরে। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছেন নারায়নগঞ্জে। বাবা আবুল হাসেম এবং মা হাসিনা আক্তারের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় প্রমি।

ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী ইসরাত জাহান প্রমি। পঞ্চম শ্রেণিতে স বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সর্বপ্রথম ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান প্রমি। হাই স্কুলেও রেখেছেন নিজের মেধার স্বাক্ষর। অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি, ১০ শ্রেণিতে উপজেলা পর্যায়ে বৃত্তি লাভ করেন। এসএসসি এবং এইচএসসি দুটোতেই পেয়েছেন গোল্ডেন এ প্লাস।
ছোটবেলা মানুষের ডাক্তার হওয়ায় স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছেন প্রমি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তা বদলে যায়।

প্রমির ভাষায়, মেডিকেলে ভর্তি হতে ব্যর্থ হলে কৃষি সেক্টরে চাকুরীর সুযোগ থাকায় বাবার পরামর্শে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। চান্সও পাই। অনুষদ চয়েসের ক্ষেত্রে প্রথমে কৃষি অনুষদ দিলেও ওয়িন্টেশনের দিন দেখি আমি পেয়েছি ভেটেরিনারি অনুষদ। প্রথমদিকে ভেটেরিনারিতে পড়ার আমার ইচ্ছা ছিল না । বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। পরে বিশ^বিদ্যালয়ে স্যার- ম্যামরা ভেটেরিনারি সম্পর্কে ধারণা দিলে জানতে পারি ভেটেরিনারিতে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। তখন ভেটেরিনারির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। এরমধ্যে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে আমার ম্যাথ এ চান্স হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেই ভেটেরিনারি নিয়েই পড়ব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিকে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৬৭ পেলে সিদ্ধান্ত নেই আরো ভালো রেজাল্ট করতে হবে। ভালোভাবে পড়া শুরু করি। দ্বিতীয় সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৯৪ এবং ৩য় সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।

একদিন বাবা একটা বৃত্তির আবেদন করতে বলেন। রেজাল্ট ভালো থাকায় আবেদন করি। আবেদনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. কে বি এম সাইফুল ইসলাম স্যার। আমাদের অনুষদীয় ডিন প্রফেসর ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম স্যারও অনেক সাহায্য করেন। আমি স্যারদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে প্রমি বলেন, ভেটেরিনারিতে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছ্।ে আমার প্রবল ইচ্ছা গবেষণা করার। এছাড়া আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্ট্রিট এনিম্যালদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট দিব। সেইসাথে একটি আধুনিক ভেটেরিনারি হাসপাতাল গড়ে তুলব। যাতে কোনো প্রাণী বিনা চিকিৎসায় না মারা যায়। সেজন্য আমি সকলের দোয়াপ্রার্থী।

নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভেটেরিনারিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এটি একটি বিশাল সেক্টর। এতে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদেশে ভেটেরিনারিয়ানদের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

প্রমি বলেন, এ বৃত্তিলাভ আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশে এমন বৃৃত্তির ব্যবস্থা করা উচিত, তাহলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। মেধাবীরা মূল্যায়ন পাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।