ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  মহামারি করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণকে রক্ষায় কাজ করা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। করোনার সঙ্কট মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি দিতে তালিকাও প্রস্তুত করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর যা অধিকাংশ কাজই প্রায় সম্পন্ন। এদিকে করোনায় বন্ধে সংসদ টিভিতে ক্লাস প্রচারের পর এবার রেডিওতেও প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা প্রচারের এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে অধিদফতর।

করোনার ছোবলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা যোদ্ধাদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আর্থিক নানা সুবিধার ঘোষণা দেয়া হলেও বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে কাজে উৎসাহিত করতে সম্মান জানানোর পরামর্শও দিচ্ছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে চিকিৎসকসহ করোনার যোদ্ধাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে তাদের কাজে অনুপ্রাণিত করতে ব্যতিক্রমী সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে যারা কাজ করছেন তাদের কাজে অনুপ্রাণিত করতে ব্যতিক্রমী কিছু করার কথা বলে আসছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

আর্থিক সুবিধার বাইরেও তাই এবার করোনা যোদ্ধাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সারাদেশে অসংখ্য শিক্ষক কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, হ্যাঁ আমরা সেইসব করোনা যোদ্ধাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করতে চাই। সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা আছেন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের তালিকা আমরা প্রস্তুত করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাচ্ছেন।

মহাপরিচালক বলেন, আসলে যারা এভাবে কাজ করছেন তাদের কাজের স্বীকৃতি দিলে তারাও কাজে আগ্রহ পান। তারা অন্তত জানেন ভাল কাজের মর্যাদা আছে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ। মহাপরিচালক আরও বলেন, এ কাজে যারা স্বীকৃতি পাবেন তাদের তথ্য থাকবে আমাদের কাছে। পরবর্তীতে দেশের যে কোন সমস্যায় সময়ে মাঠ পর্যায়ে আমরা তাদের মাধ্যমে কাজ করতে পারব। এটা একটা ভাল পদক্ষেপ হবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের কাজের স্বীকৃতি আমরা দিতে চাই। এজন্য তাদের তালিকা সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে যা ইতিমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, নির্ধারিত ছকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তথ্য সংযুক্ত করে ইমেলে ১৭ মের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের। জেলা ওয়ারি আলাদা আলাদা ছকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নাম, পদবি, বর্তমান কর্মস্থল, দায়িত্বের বিষয়ে এবং মন্তব্য উল্লেখ করে এসব পূরণ করতে হবে।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শীঘ্রই সংসদ টিভিতে ক্লাস প্রচার ছাড়াও রেডিওতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচার করা হবে। ইউনেস্কোর অর্থায়নে বাংলাদেশ বেতারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস প্রচার করা হবে।

মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, সংসদ টেলিভিশনের এবার ভিডিওতে ও প্রাথমিকের প্লাস সম্প্রচার শুরু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারব। সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচারের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে ইউনেস্কো। তাই শিক্ষার্থীদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে রেডিওতে ক্লাস প্রচারে অর্থায়ন করবে সংস্থাটি।

মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং এটুআই সমন্বয় করে রেডিওতে প্রচারের কন্টেন্ট তৈরি করবে। যেগুলো বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হবে। অন্যান্য বেসরকারী ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রচারের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, খুব সহজে স্মার্টফোনের মাধ্যমে রেডিও শোনা যায়। তাই এ উদ্যোগের ফলে তৃণমূলের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল সংসদ টেলিভিশনে শুরু হয়েছে প্রাথমিক স্তরের ক্লাস সম্প্রচার। সংসদ বাংলাদেশ টিভির মাধ্যমে থেকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রেকর্ড করে ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম এ ছয় শ্রেণীর তিনটি ক্লাস সংসদ টিভিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাস ২০ মিনিটের। যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।

দীর্ঘসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বাসায় অবস্থান করেই ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সংসদ টেলিভিশনে রেকর্ড করা শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (১২ মে ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও ছয় হাজার ৮৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ছয় হাজার ৭৭৩টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৮টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৯৬৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫০-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৪৫ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন হাজার ১৪৭ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/১২ মে  ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।