নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা;  বাবা ও ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আজ রবিবার ভোরে মারা গেলেন বাবা।

নিহত ব্যক্তি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ছিলেন। পরে লাশ দাফনের জন্য হাসপাতাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত নিয়মাবলী অনুসারে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ও জীবাণুনাশক দিয়ে গোসল করিয়ে প্যাকেট করে ফ্রিজিংভ্যানে তুলে দেওয়া হয়।

কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে লাশটি দাফনের জন্য নেওয়ার পথে লাশবাহী ফ্রিজিংভ্যানটি আজ রবিবার (১০ মে ২০২০) দুপুরে আটকে দেওয়া হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্টে।

দাউদকান্দি চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আখতারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেন, করোনায় কুমিল্লার বাইরে মৃত্যু হওয়া কারও লাশ কুমিল্লায় দাফন করতে দেওয়া হবে না। তাদের কাছে এমন নির্দেশনা রয়েছে।

এই অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে লাশটি দাউদকান্দি চেকপোস্টে ফ্রিজিংভ্যানে পড়ে ছিল। লাশের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা কী করবেন তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না।

এ বিষয়ে কুমিল্লা দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন নিদের্শনা আছে। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের জন্য তো আলাদা জায়গা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই তারা লাশটি নিয়ে দাফন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও মহোদয়ও বলেছেন, লাশের গাড়ি এলাকায় গেলে গ্রামের মানুষ ঝামেলা করতে পারে। তাই গাড়িটিকে লাশসহ ঢাকায় ব্যাক করতে বলা হয়েছে।’

পরে বিকেল ৪ টার দিকে ওসি ফোনে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলেছে। তাই লাশের গাড়িটি চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী ও নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, অবসরের বেশ কয়েক বছর পর এই ব্যক্তি ঢাকায় ছেলের কাছে চলে যান। সেখানেই তিনি থাকতেন। ৬ মে তাঁর এক ছেলে ও তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। এরপর তাঁদের রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আজ রোববার ভোর পাঁচটায় তিনি মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (১০ মে )  তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস শনাক্তে  গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৬৪২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় পাঁচ হাজার ৭৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ২২ হাজার ৬৫৭টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৮৮৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৫৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১৪ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২৮-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৩৬ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৬৫০ জন।

আমাদের বাণী ডট/১০ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।