জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা;  প্রতি বছর রমজান মাসে রাতের শহরে পরিণত হয় সৈয়দপুর। বছরের ১১ মাস একরকম থাকে আর রোজার মাসে পুরোপুরি বদলে যায় এ শহরের দৃশ্যপট। বাজারের বিপণী বিতান ও শপিংমলগুলো ১১ রমজান থেকে শুরু করে চাঁদ রাত ভোর পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পবিত্র ওই মাসের শুরু থেকে ২৫ রোজা পর্যন্ত ধুমছে কেনাবেচা হয় কাপড়ের দোকানগুলোতে। দর্জি বাড়ীগুলো রোজার শুরু থেকেই অর্ডারি পোশাক তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটায় ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। সারারাত ক্রেতা, বিক্রেতাদের ভীড়ে সৈয়দপুর শহরটি দেশের ভিন্ন এক শহরে পরিণত হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মচারীরা পুরো এক মাস রাতের ও সেহেরীর খাবার খেত হোটেলে।

এজন্য স্থায়ী খাবার দোকানের বাইরেও রেললাইনের পাশে শত শত অস্থায়ী খাবার দোকান গড়ে উঠতো। কিন্তু বিশ্ব বিধ্বংসী করোনা ভাইরাস সৈয়দপুর শহরের শত বছরের ঐতিহ্যকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। বিশেষ করে ২০ রমজানের পরে কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে নারীদের ভীড় দেখা যেত চোখে পড়ার মত। ইফতারির পরেই নারী ও টিনএজ মেয়েদের ঢল নামতো শহরের রাজপথে। এদের সবার গন্তব্য ছিল সাজসজ্জার দোকানে। মসল্লার বাজারে কেনাবেচা শুরু হতো ২৫ রমজান থেকে। দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলা ক্রেতাদের ভীড় ১০ গুণ বেড়ে যেত।

করোনা ঝড়ে সবকিছুই উলট পালট হয়ে গেছে। সরকারের হুকুমে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কড়াকড়ি নিয়ম ঘোষণা থাকায় বাজারে ক্রেতাদের ভীড় অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। দর্জি বাড়ীগুলো বন্ধ। বিকাল বেলার পর শহরটি আগের চেনা শহরের বদলে ভূতুরে শহরে রূপ নিয়েছে। নেই সেই রকমারী খাবারের দোকান। বিরিয়ানী দোকানীদের হাঁকডাকও শোনা যাচ্ছে না।

কথা হয় কাপড় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পূর্বের বছরগুলোতে কাপড়ের দোকানীরা রমজান মাসের আয় দিয়ে সারা বছরের সংসার খরচ চালাতো। করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু বদলে গেল। তার মতে অর্থনীতির চাকা সচল না থাকায় মুসলমানদের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ ফিঁকে হতে চলেছে।
কথা হয় তৈরী পোশাক বিক্রেতা আবুল কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, রমজান মাস শুরুর তিন মাস আগ থেকেই আমরা ঢাকার পাইকারী বাজার থেকে কাপড় নিয়ে এসে মজুদ গড়ে তুলি। এ বছরও তেমন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আশায় গুড়েবালি হয়েছে।

কসমেটিক্স ব্যবসায়ী নেওয়াজ আহমেদ বলেন সৈয়দপুর শহরে আমাদের ব্যবসার বেচাকেনা শুরু হয় ২০ রমজান থেকে। বিশেষ করে নারী ক্রেতারা ইফতার শেষে বাজারে আসে আর স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করে মধ্য রাতে বাড়িতে ফিরে। এবারে বিকাল বেলা থেকেই দোকান বন্ধ থাকছে। এজন্য আশানুরুপ ক্রেতা এ বছর মিলবে না। তাছাড়াও মানুষের হাতে সঞ্চিত অর্থও নেই বলে ওই ব্যবসায়ী জানান। তার মতে করোনার কারণে মানুষ কর্মহীন অবস্থায় ঘরে বসে হাতের পাঁচ সংসারেই শেষ করে দিয়েছে।

কথা হয় শহরের বিশিষ্টজন পপুলার ল্যাব ও মিশন জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বিশ্ব আতংক করোনার কারণে। অন্য বছরের তুলনায় ঈদুল ফিতরের বাজেট এক চতুর্থাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, যেখানে মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন সেখানে আনন্দ মিছে হয়ে ওঠে।

আমাদের বাণী ডট/১৪   মে ২০২০/পিবিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।