মো. সাজ্জাদ হোসেন
ছবি; লেখক শিক্ষক মো.সাজ্জাদ হোসেন

মো.সাজ্জাদ হোসেন; কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় সারা বিশ^ আজ বিপর্যস্ত। সারা বিশ্বে লাশের মিছিল। মৃত্যু আজ ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ঘর থেকে বের হলে মনে হয় মৃত্যু এসে গ্রাস করবে। সারা বিশে^র চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবুও চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ ব্যর্থ। বিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা শত চেষ্টা করেও করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারছে না। কমছে না মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন লাশ হচ্ছে হাজার ও মানুষ।

করোনা ভাইরাস চীন থেকে উৎপত্তিু হয়ে ইতালি, স্পেন,ফ্রান্স,যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কঠিন আঘাত হেনেছে । মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের পাশাপাশি স্বল্পন্নোত এবং নিন্ম আয়ের দেশগুলোর ওপর আঘাত হেনেছে। বিশে^র প্রতিটি দেশে ঘোষিত ও অঘোষিত লকডাউন চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। ঘর হলো সবচাইতে নিরাপদ জায়গা। কিন্তু অনেক মানুষ ঘরে থাকার পরেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মেটানোর দুঃচিন্তা তাদের কে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা। করোনার মহামারিতে সবচাইতে দুঃচিন্তাগ্রস্থ হলো নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

মধ্যবিত্ত হলো ধনী ও দরিদ্রের মাঝামাঝি শ্রেণিভুক্ত মানুষ। নিন্ম বিত্ত হলো অপ্রতুল সম্পদবিশিষ্ট,অসচ্ছল পরিবারের মানুষ। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে নিন্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচাইতে বেশি। দেশের ক্রান্তিকালে এই দুই শ্রেণির মানুষের দুঃখ দুর্দশা সবচাইতে বেশি। নিন্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সারা বছর কাজ থাকেনা। সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকেনা। বছরের নির্দিষ্ট কিছু মাস কাজ করার পর সারা বছর ঘরে বসে বসে খেতে হয়। সঞ্চয় শেষ হলে পেটের তাগিদে আবার কাজে নামতে হয়। ধার দেনা করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হয়। সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে নিজেদের অভাব অনটনের কথা প্রকাশ করার মত কোন উপায় ও থাকেনা। লোক চক্ষুর অন্তরালে নিরবে নিভৃতে নির্জনে অশ্রু বিসর্জন দিতে হয়। করোনার চেয়ে ভয়ংকর যন্ত্রণা হলো পেটের ক্ষুধা। যেটা নিবারণের জন্য প্রতিনিয়ত নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের লড়াই করতে হয়। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় তারা করোনার ভয়ে ভীত নন। তারা পেটের ক্ষুধার জ¦ালায় ভীত।

দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালে কাজ করার মত পরিবেশ বিরাজমান নেই। দু-সপ্তাহের বেশি সময় ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। আর কতদিন ঘরে বসে কাটাতে হবে তা কেউ বলতে পারেনা। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। নিজস্ব আয় দিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতেই সব শেষ হয়ে যায়। সঞ্চয় করার মত কিছুই থাকেনা। যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইয়ের অধিক স্ত্রী,সন্তান,বাবা-মা ও অন্যান্য সদস্যসহ যাদের পরিবার,তাদের বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। যাদের কাজ থাকেনা তাদের তিনবেলা খাবার ও জোটেনা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসন অসহায় দুঃস্থ মানুষদের হাতে সরকারি সহযোগিতা তুলে দিচ্ছে। সমাজের উদার মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষ মানবতার ডাকে অসহায় দুঃস্থদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় দুঃস্থদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার জন্য কিছু অসৎ মানুষ অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। সরকারি ত্রাণ নিজেদের গুদামে মজুদ করে রেখেছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে তাদের চরিত্র জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। বৈশি^ক মহামারির সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যক্তিস্বার্থে খাদ্য দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ জনগণের পকেট কাটার সুযোগ ও তৈরি করেছে। করোনা ভাইরাসে মৃত্যুভয় তাদেরকে কোন ভীতি সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি সত্বেও জনগণের অসচেতনার সুযোগে পাইকারি ও খুচরা কারবারীরা ইচ্ছেমত দ্রব্য মূল্যের দাম হাকাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈশি^ক সমস্যা মোকাবেলার জন্য আপদকালীন মুহুর্তে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ও ঘোষণা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করেছে মধ্যবিত্ত,দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের তালিকা তৈরি করে তাদের হাতে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিতে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এই মহা দুর্যোগে যারা আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করবে তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। সকল প্রণোদনা দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈশি^ক এই মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সময় যত গড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের ছোবল তত ভয়ংকর হচ্ছে। প্রতিদিন সারা বিশে^ অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। লাশের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। কাজ কর্ম বন্ধ রেখে মানুষকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। ঘরে বসে খাবারের চিন্তা করতে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাল মন্দ অনেক খবর আসছে। প্রশাসনের সহযোগিতাপূর্ণ ভাল খবর ও আসছে। রাতের আধাঁরে প্রশাসন ও সমাজের দানবীর মানুষ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে সহযোগিতা করছে। যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তারা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা ও চক্ষু লজ্জার ভয়ে কোন সাহায্য সহযোগিতা হয়তবা গ্রহণ করতে পারছে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রশাসন যদি নি¤œবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহযোগিতা সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেয় তাহলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ও উপকৃত হবে। করোনা যুদ্ধে সবাই শামিল হয়ে কোভিড-১৯ কে পরাস্ত করতে পারবে।

লেখক;- প্রভাষক,হিসাব বিজ্ঞান, লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমাদের বাণী ডট কম/০৮ এপ্রিল ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।