হুমায়ুন কবির, কুষ্টিয়া জেলা সংবাদদাতা;  করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় খুলনা বিভাগের দশ জেলার একটি কেন্দ্রীয় কারাগার ও নয়টি জেলা কারাগার থেকে মোট ৩০ জন মুক্তি পেয়েছেন, এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ১৮ জন । মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন আরো বেশ কিছু বন্দি। করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারন করায় সরকার কারাগারগুলোর হাজতি ও কয়েদিদের সুস্থতার স্বার্থে বেশ কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ঈদ উপলক্ষেও কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এবারের করোনা পরিস্থিতিতে তিন ক্যাটাগরির বন্দিরা মুক্তি পাবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। ক্যাটাগরি তিনটি হলো, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি, স্বল্পমেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘমেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত; যারা ইতিমধ্যে ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত উপ-মহা কারা পরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস)-এর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা বিভাগের জেলখানাগুলোতে বন্দি ৬১৭ জনের নামের তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে অন্ধ, অচল ও অক্ষম ছয়জন রয়েছেন। সর্বোচ্চ ছয় মাস দণ্ডপ্রাপ্ত ১৮৯ জন, সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২৭৪ জনের নাম পাঠানো হয়।

আর দীর্ঘমেয়াদে দণ্ডিত কয়েদি, যাদের ইতিমধ্যে ২০ বছর জেল খাটা হয়ে গেছে, এমন ১৪৮ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। তালিকায় যাদের নাম ছিল, তাদের মধ্যে থেকে ইতিমধ্যে দুই দফায় গত ৩ ও ৪ মে ৩০ জন মুক্তি পেয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। বন্দিমুক্তির আর কোনো অনুমোদন এখনো যশোরে এসে পৌঁছায়নি। আদেশ আসার পর সংশ্লিষ্টরা মুক্তি পাবেন।

বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দ্রুতই কার্যকর হবে বলে কারাসূত্র জানিয়েছে। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনজন, খুলনা জেলা কারাগার থেকে দুইজন, কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ১৮ জন, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইল জেলা কারাগার থেকে দুইজন করে, মাগুরা, মেহেরপুর ও বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে একজন করে রয়েছেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে নারীও ছিলেন। মাদক মামলার দণ্ডিত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মহেশকুণ্ডু গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী সুর্য বেগম (৪২) ও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার খুনশি গ্রামের আফসার তালুকদারের মেয়ে নাজমা বেগম (৪৮) কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পান।

খুলনা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ছগির মিয়া বলেন, তার অধীনস্থ দশটি কারাগার থেকে ইতিমধ্যে ৩০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু বন্দি মুক্তি পাবেন। শিগগির হয়তো সেই নির্দেশনা চলে আসবে। ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।  চিঠি এলেই তাদের মুক্তি দিতে পারব,’ বলেন ডিআইজি (প্রিজনস) ছগির মিয়া।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিনকান্তি খান জানান, যশোর শহরের খোলাডাঙ্গার ইউসুফ আলির ছেলে বাবু (৫০), পূর্ববারান্দিপাড়ার ফজলুল হকের ছেলে ওহিদুল ইসলাম এবং ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর গ্রামের নুর বক্সের ছেলে নেসার আলী (৫৮) এই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

নড়াইল জেলা কারাগারের জেলার আবু সায়েম জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কালিয়া উপজেলার নওয়াঘাটা গ্রামের জালাল শেখের ছেলে জাকির হোসেন এবং একই উপজেলার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের জলিল শেখের ছেলে সজীব শেখের কারাদণ্ডাদেশ মওকুফ হয়েছে। এরা লঘুদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। ইতিমধ্যে জাকির হোসেন মুক্তি পেয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। সজীবকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দশ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সজীবের পরিবার জরিমানার টাকা দিতে না পারায় তাকে ওই দশ দিন কারাভোগ শেষে মুক্তি নিতে হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে এপ্রিল মাসে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে লঘু দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের সুপার জাকের হোসেন। তিনি ঐ সময় বলেন, ‘‘কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ছয়শ’ জন বন্দীর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্দী আছে নয়শ’রও বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক ‍দূরত্ব মানা এখানে প্রায় অসম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত জেলা কারাগারে থাকা কোনো রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়নি। ‘সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী আমাদের কাছ থেকে কম ও লঘু সাজাপ্রাপ্তদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেয়েছিল। আমরা তা পাঠিয়েছি। এদের মুক্তির ব্যপারে সিদ্ধান্ত হলেও হতে পারে।”

আমাদের বাণী ডট কম/০৭ মে ২০২০/এবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।