মোঃ সোহাগ আলম, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা;  করোনার ভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব।দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল,দীর্ঘ হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির ঘণ্টা।এ যেন মানব সভ্যতার এক নতুন ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে করোনা ভাইরাস। এই স্থবিরতায় যুক্ত হয়েছে আমাদের বাংলাদেশ।
করোনা ভাইরাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটি কেমন কাটছে এবং কিছু স্মৃতিচারণ তুলে ধরেছে চার মেধাবী শিক্ষার্থী:

ইএসটি বিভাগের রাহামনি খানম জানান, আমাদের প্রিয় যবিপ্রবিতে যাই না প্রায় দেড় মাস।ক্লাস,সিটি,ল্যাব করতে করতে যখন হাঁপিয়ে উঠছিলাম,ঠিক তখন এই ছুটি। কিন্তু এই ছুটি কাম্য ছিল না, এতোদিনের জন্য এরকম ছুটি চাওয়ার ছিল না।

প্রিয় যবিপ্রবি,তোমাকে ভীষণ মিস করছি।মিস করছি,৩৫ একরের ওই সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ, পিচ ঢালা রাস্তা, প্রিয় ক্লাস রুম। মিস করছি,ক্লাস শেষের আড্ডা,ক্যাফেটেরিয়া, লাল বাস। সত্যি বলতে ভীষণ মিস করছি, প্যারাময় ক্লাস জীবনও।

সময় যেন কাটছে না। তবু কোয়ারেন্টাইনের সময়গুলো কাজে লাগানোর জন্য আত্নজীবনীমূলক বই পড়ছি। একাডেমিকের পড়াগুলোও দেখছি।পরিকল্পনা করছি কোয়ারেন্টাইন শেষে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো।

অতিদ্রুত ফিরতে চাই, সুস্থ, সুন্দর, সাবলীল,প্রাণবন্ত, চিরচেনা,পরিচ্ছন্ন যবিপ্রবির ক্যাম্পাসে।ফিরতে চাই ক্লাসরুমে। আমাদের স্বর্গ প্রিয় যবিপ্রবি ততোদিন তুমি ভালো থেকো।

অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল হুদা ফয়সাল জানান, আণুবীক্ষণিক এক পরাশক্তির কাছে গোটা বিশ্ব এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষ হয়েছে ঘরবন্দী। নিজেকে এই মূহুর্তে স্টুডেন্ট ভাবতে পারছিনা কারণ এমন এক আতংক এর ভিতরে আছি যে মনে হচ্ছে পড়াশোনা এখন এক রকম বিলাসিতা।

“Be safe, stay home.” এই শব্দগুলো এখন এতটাই পরিচিত হয়েছে যে প্রিয়জন হারানোর ভয় ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। আমার মনে হয় অর্ধেক এর বেশি শিক্ষার্থী ডিপ্রেশন এ ভুগছে, এমনকি আমার নিজেরও পাগল পাগল লাগছে। ছুটি পেয়েছি কিন্তু আসলেই কি ছুটি?? নাকি এক অনিশ্চিত আতংক নিয়ে পরের দিন বেচে থাকার লড়াই এটা।

এতো অস্থিরতার মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয় এর সবুজ ক্যাম্পাসটায় বার বার চোখে ভেসে উঠে। মনে হয় দৌড়ে চলে যায় যবিপ্রবির চিরচেনা সেই ভালবাসার ৩৫ একরে। এই মহামারীর অবসান হোক, খুলে যাক সকল মুক্তির দোয়ার এটাই কাম্য। পড়াশোনার ও অনেক ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু সেটা তো পুষিয়ে নেওয়া যাবে তবে প্রিয়জন হারানোর ক্ষতি কি পূরণ করা যাবে?

পিইএসএস বিভাগের মোছাঃ আশুরা খাতুন জানান, পৃথিবীর এই অবস্থায় চাইলেও জিবন নিয়ে সিরিয়াস কিছু ভাবতে পারছি না। জিবনের কাটানো খুবই সামান্য এবং আলসেমি আর মজার সময়গুলোই বারবার করে নাড়া দিচ্ছে, ভাবাচ্ছে আবার হবে তো সেই সময়গুলো জিবনে?

ভোরে ঘুম ঘুম চোখে দৌড়ে গিয়ে ক্লাস ধরা, থিওরি মানেই সব স্টুডেন্টের কাছে বোরিং ক্লাস, ক্লাসের পেছনে বসে বন্ধুদের সাথে খুনসুটি, চায়ের আড্ডায় এক প্যাকেট বিস্কুটের কাড়াকাড়ি, হইচই হুল্লোড়, চায়ের কাপে আড্ডায় ঝড় উঠানো, বন্ধুরা মিলে খাওয়া ঘোরা প্রচন্ডভাবে মিস করছি। মনে হতো ছুটি হোক অনেক দিনের, বেঁচে যায় বোরিং ক্লাসগুলা থেকে। ছুটি তো অনেক পেলাম কিন্তু মনে হচ্ছে সেই বোরিং ক্লাসগুলাকেই কত যে ভালোবাসি এখন বুঝতে পারছি। পৃথিবী তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো আবার আমরা একসাথে বোরিং ক্লাসগুলা করতে চায়, বন্ধুরা মিলে চায়ের দোকানে একসাথে বসে আবার আড্ডা দিতে চায়।

দিন কাটছে কোয়ারান্টাইনে বন্ধ অবস্থায়, তার মধ্যে সময় কাটছে বই পড়ে। বরাবরই বই আমার খুব প্রিয়। সাথে আম্মুকে কিছু হেল্প করে, মাঝে মাঝে বাংলা সাদাকালো সময়ের কিছু ছবিতে। পরিবারের সাথে সময় আমরা খুব কমই কাটায়, পরিবারকে সময় দিন ভালো লাগবে, সময় কাটবে এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং টাও ভালো হবে।

ইএসটি বিভাগের সালেহ শাকিল জানান, আমার কাছে ভার্সিটি ছুটি সব সময়ই ঈদের মজার থেকে কোন অংশে কম ছিল না, কিন্তু এইবারের ছুটিটা একদমই অন্যরকম। মাত্র ১০ দিনের জন্য বাসায় এসে এখন হতে চললো প্রায় ২ মাস। যদিও বন্ধের শুরুতে তেমন খারাপ না লাগলেও আস্তে আস্তে যত দিন যাচ্ছে ততই খারাপ লাগছে। এই মহামারী করোনাভাইরাসের কারনে পুরো পৃথিবী এখন গৃহবন্দী। বাহিরে যাওয়ার কোন উপায় নাই। এখন প্রতিটা দিনই নিজের কাছে একরকম মনে হয়। এখন রুমের মধ্যে টিভি দেখা, মোবাইল টিপা এ বাদে আর কোন কাজ নাই। যদিও পরিবারকে অনেক সময় দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও বলবো এইভাবে আর শুয়ে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না, একটু বাহিরে যেতে চাই, একটু বন্ধুদের সাথে আগের মত আড্ডা দিতে চাই, একটু আগের মত জীবন কাটাতে চাই।

আমাদের বাণী ডট কম/০৩ মে ২০২০/সিসিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।