নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  প্রাণঘাতি করোনার ছবলে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে আরও ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে দুজন চিকিৎসক। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ জন। আজ শুক্রবার (২৭ মার্চ ২০২০) বেলা ১১টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ১০২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার (২৪ মার্চ ২০২০) থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ ২০২০) পর্যন্ত আমাদের বাণী ডট কম এর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে  ৮ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী; চৌমুহনী পৌরসভায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।  বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পাবলিক হলের পাশের একটি ভবন ঘিরে রেখে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ ২০২০) রাতে   সর্দি-কাশি ও জ্বর আক্রান্ত এক যুবকের (২৩) মৃত্যুর পর পুরো ভবনটি কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, যে যুবক মারা গেছেন, তিনি চৌমুহনীতে এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। গত দুদিন ধরে এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বাসায় তার চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তার বমির সঙ্গে রক্ত যেতে থাকে। এরপর স্বজনরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে জেলা সদরের ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়ার আগে যে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ওই যুবক তিনি জানান, গত মঙ্গলবার তার কাছে নিয়ে আসার পর জানতে পারেন ওই যুবক ছয়-সাত দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি অবস্থা জানার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। সন্ধ্যায় তার বমি হচ্ছে এবং সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে জানানোর পর তিনি দ্রুত জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, হাসপাতালে এক যুবককে আনার পর জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ ব্যপারে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস বলেন, ‘বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভবনটি হোম কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ ভবন ঘিরে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন চৌমুহনী পাবলিক হলের পাশের ভবনটি কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করার পর ঘিরে রাখা হয়েছে।’

খুলনা; গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ ২০২০) দুপুর দেড়টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক রোগীর (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ।  নিহত ঐ ব্যক্তির বাড়ি খুলনা মহানগরীর হেলাতলা এলাকায়। এ নিয়ে এক শিক্ষকসহ খুলনা এ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন। আর সারাদেশে গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত মারা গেছেন আরও তিন জন।

স্থানীয় সাংবাদিকদের খুমেক হাসপাতালের পরিচালক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই রোগী সম্পর্কে খুমেকের ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ তার ফেসবুক পেইজে একটি স্টাটাস দেন। তাতেও তিনি ওই রোগী করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে ওই রোগী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন এবং এই একই আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।

ডা. মেহেদী নেওয়াজ তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ওই রোগী মডার্ন হাসপাতালে থাইরয়েড অপারেশন করিয়েছিল। তাকে যে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল, সেই আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত এক রোগী ছিল। তিনি ওই রোগীর করোনা সংক্রমণ হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এই অবস্থায় ওই রোগীর সংস্পর্শে যেসব চিকিৎসক, নার্স গিয়েছিলেন তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে চলতি মাসের গত বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ ২০২০) রাত সোয়া নয়টার দিকে  জ্বর, কাশি ও গলা ব্যাথায় আক্রান্ত রবিউল ইসলাম (৫৬) নামের এক প্রবাসীকে  খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত রবিউলের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায়। তিনি এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, মৃত রবিউল এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে দেশে ফেরার পর থেকে জ্বর, কাশি ও গলায় ব্যাথায় ভুগছিলেন। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে রবিউলকে জরুরি বিভাগে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

একই দিন রাতে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামের নিজ বাড়িতে জ্বর-ঠান্ডায় বিষ্ণুপদ বিশ্বাসনামের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বিষ্ণুপদ শিয়ালী গ্রামের মৃত পবন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি শিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ওই শিক্ষকের ভাই মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, গত ৮ মার্চ ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসেন বিষ্ণুপদ বিশ্বাস। তার বড় ধরনের কোনো রোগ ছিল না। আসার পর শুধু জ্বর-ঠান্ডা ছিল। গত রাতে হঠাৎ মারা যান তিনি।

খাগড়ছড়ি;  প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হওয়ার ১০ ঘণ্টা পর এক মারমা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম সাজাই র্মামা (৩০)। খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন তিনি। গতকাল বুধবার (২৫ মার্চ ২০২০) রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সাজন ডা. নুপুর কান্তি দাশ। এসময় ওই রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ১ চিকিৎসক, ২ নাস ও ১ আয়াকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পূর্ণজীবন চাকমা জানান, গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে ৩০ বছর বয়সী এক পাহাড়ী যুবক শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসলে লক্ষণ দেখে চিকিৎসক তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এদিকে ওই মারমা যুবকের লক্ষণ দেখে সন্দেহ হওয়ায় নিহত ব্যক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকসহ, ২ নার্স ও ১ আয়াকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তি দিন মজুরী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছে স্বজনরা। মরদেহ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিহতের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

মানিকগঞ্জ: জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জে এক ব্যক্তিকে দাফনের পর একটি গ্রামকে লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই গ্রামে ছয়টি বাড়ির ২৬ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

শিবচর (মাদারীপুর): ঢাকার আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিবচরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ইতালিফেরত এক প্রবাসীর বাবা। ওই প্রবাসীর স্ত্রী, দুই সন্তান, শাশুড়িসহ পরিবারের আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): সর্দি-কাশি ও জ্বরে এক নারীর (৫৫) মৃত্যু হওয়ায় করোনা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর উদ্দীন বলেন, ওই নারী হার্টের রোগী ছিলেন। তার মায়ের ছিল শ্বাসকষ্ট। বৃদ্ধা মায়ের সেবা করতে গিয়েই সম্ভবত তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা কেউই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। এর পরও সন্দেহ থাকায় তার স্বজনদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।

সিলেট: হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা সিলেটের এক বৃদ্ধ (৬৫) মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাতে নিজ বাসায় তার মৃত্যু হয়। নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার ওই বাসিন্দা দেশে থাকলেও তার ছেলে সপ্তাহখানেক আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিলেন বলে জানা যায়।

রাজশাহী: করোনা ভাইরাস পরীক্ষার আগেই জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ৪৬ বছর বয়সী ওই নারী মারা যান।

আমাদের বাণী ডট কম/২৭ মার্চ ২০২০/ডিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।