নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  বাংলাদেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আতঙ্ক দেখা গিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আর এই আতঙ্কে উদ্বিগ্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত লক্ষণ উল্লেখ করে সতর্কতা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। দেশের সব স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে মাউশি এ বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

এ ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে এখন আতঙ্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকরাও। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা প্রশাসন থেকে বিদ্যালয় বন্ধের কোনো নির্দেশনা না আসায় তারা স্বাভাবিক নিয়মেই পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কিত। তার পরও করোনা নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সর্বদা সচেতন করার চেষ্টা করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে বলে একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। মন্ত্রণালয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যদিও অভিভাবকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এর আগে ১৩টি দেশ সব স্কুল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ায় এখানেও প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে তারা চিন্তিত।

এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তিনি তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে- স্কুলের চেয়ে জনসমাগম আর কোথায় বেশি? স্কুলে প্রবেশ এবং ছুটি হওয়ার সময় বের হতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি আসে।

এ ছাড়া ছোট ছোট ক্লাসরুমে ৪০/৭০ শিক্ষার্থী ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অবস্থান করে। কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীরা একটি বেঞ্চে ৪-৬ জন গাদাগাদি করে বসে। এসব কী সরকার ঝুঁকি মনে করে না?

জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাজাহান বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে। বাচ্চারা মাস্ক পরে ক্লাসে আসছে। আমরা নতুন করে ক্লাস পরীক্ষার রুটিন করছি না। স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকার যখন নির্দেশনা দেবে, তা আমরা মেনে চলব।

এ বিষয়ে মাইলস্টোন কলেজের উত্তরা ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) এম. কামালউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ক্লাসের উপস্থিতি এখনো স্বাভাবিক আছে। তবে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক আমাদের সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। সরকার পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত দেবে। আবার বন্ধ করে দেওয়াই সমাধান কিনা, সেটাও ভাবতে হবে। আগামী মাসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। এখন একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছে।

এ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের মতামত অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো এখনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বুধবার (১১ মার্চ ২০২০) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। ‘করোনা ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় করণীয়’ শীর্ষক নির্দেশনায় বলা হয়, সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার্থে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন।’

জানতে চাইলে এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেই। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা জানানো হবে। আমরা করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব এড়াতে সচেতনতামূলক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

আমাদের বাণী ডট কম/১২ মার্চ ২০২০/সিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।