শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব;  সারাবিশ্ব আজ আক্রান্ত পুরনো কিন্তু বিবর্তিত এবং এখন পর্যন্ত অজেয় এক ভাইরাস কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসে। কোন ভ্যাক্সিন নেই। নেই কোন প্রতিকার। প্রতিরোধই একমাত্র উপায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে। করোনা প্রতিরোধে তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিভাগও পরামর্শ দিয়েছেন সকলকে শারিরীক এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে। আর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সারাদেশে প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি।

স্থগিত করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সকল আয়োজন এবং জাতীয় দিবসের আয়োজন। এমনকি আমাদের প্রাণের উৎসব বর্ষবরণের আয়োজনও করতে হয়েছে ভার্চুয়াল মিডিয়ায়। এরই মধ্যেই জেলার পর জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে এবং ক্রমেই লকডাউনে নেয়া হয়েছে একের পর এক শহর ও জেলা। দিন দিন বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত এবং করোনায় মৃত মানুষের সংখ্যা।

এমনই বাস্তবতায় আক্ষরিকভাবেই গত ২৪ মার্চ প্রথমবারের মতো সাধারণ ছুটি ঘোষনা এবং জনসমাগম বন্ধ হবার পর থেকেই শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি অনেক সংস্কৃতি কর্মীই হয়ে পড়েছেন কর্মহীন এবং বন্ধ হয়ে পড়ে তাদের উপার্জন। কমবেশি সবাই এখন পরষ্পরের সাথে ভার্চুয়ালি কানেক্টেড। আর তাই খুব সহজেই সকলের অনুধাবন থেকেই একক এবং দলগতভাবে সারা দেশেই শ্রমজীবী মানুষসহ অস্বচ্ছল এসব সংস্কৃতি কর্মীদের পাশে নানাভাবে অনাকেই দাঁড়িয়ে যান। কেউ সরাসরি সামনে থেকে আর কেউ ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে। সকলের অন্তরে যেন ধ্বনিত হতে থাকে একটাই গান “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য…”।

সারাদেশের মতো বগুড়ায়ও দেখা গেছে এবং এখনও চলমান মানুষের জন্য মানুষের এই আকুলতা। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এই মানবিক ব্যাপারটি লক্ষ্যনীয়ভাবে প্রথম নজরে আসে ২৮ মার্চ। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আহ্বানে সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না তার সংগঠন বগুড়া থিয়েটারের মাধ্যমে প্রথম মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের এ কার্যক্রমের মধ্যে ছিল খাদ্যসামগ্রী এবং মাস্ক বিতরণ। এর আগে অবশ্য তারা ১৯মার্চ থেকেই করোনা প্রতিরোধে সসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করতে শুরু করেছিলেন।

প্রায় একই সময়েই সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না ভাইয়ের নেতৃত্বে মাঠে নেমে পড়ে বগুড়ার সাংস্কৃতিক জোটও। ৩১মার্চ এই কার্যক্রমে যুক্ত হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বগুড়া। শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্থিক এবং খাদ্যসামগ্রীর অনুদানে জোটের এ কার্যক্রম সাবলীলভাবে অদ্যাবধি চলমান। এরই মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সারাদেশের ৫০০০জন শিল্পীকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনার ঘোষনা দেওয়া হলে সেখানে তালিকাভুক্তির জন্য করোনায় অস্বচ্ছল হয়ে পড়া বগুড়ার শিল্পীদের তালিকা প্রেরণ করেছে সাংস্কৃতিক জোট। জোটের এ কার্যক্রমে কমবেশি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিশেষ ভূমিকায় দেখা গেছে সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী, অর্থ সম্পাদক রবিউল আলম অশ্রু, দপ্তর সম্পাদক এইচ আলিম, যুগ্ম সম্পাদক এস এম বেলালসহ অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গকে।

ক্রমেই জোটের সদস্য সংগঠনগুলোও নিজেদের অবস্থান থেকে করোনাকালিন মানবিক এ সহযোগিতা কার্যক্রম শুরু করে। বৃহদাকারে চোখে পড়ার মতো এমন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে অনুশীলন ‘৯৫ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, কাহালু থিয়েটার, বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার, বগুড়া শিশু নাট্যদল, অন্যান্য অনেক সংগঠন, সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক কর্মী। এক্ষেত্রেও বিশেষভাবে নজরে এসেছেন জোটের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ারুল ইসলাম, সঙ্গীত শিল্পী লিপি প্রধান, নাট্যব্যক্তিত্ব আব্দুল হান্নান, জোটের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান মিঠু, আব্দুল খালেকসহ অনেকেই।

করোনার এই দূর্যোগ কালে মানুষ, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষগুলো যেন সকল দ্বন্দ্ব আর বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে শিখলো আরেকবার। মানুষের জন্যই মানুষ, এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময় এবং চিরস্থায়ী হোক এ বন্ধন। করোনার এ দুর্যোগ কাটিয়ে আবার ফিরে যেতে চাই স্বাভাবিক জীবনসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনে। আবারো নাচতে চাই ঢাকের তালে, হারিয়ে যেতে চাই গানের সুরে, মুগ্ধ হতে চাই অভিনয় আর আবৃত্তিতে। জয় হোক বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির, জয় হোক মানবতার।

আমাদের বাণী ডট কম/২১ মে ২০২০/পিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।