পটুয়াখালী সংবাদদাতা; প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়ে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে সুন্দরবন উপকূলে ঢুকে পড়েছে । ভারতের সাগারদ্বীপের পাশ দিয়ে সুন্দরবন উপকূল দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ দিয়ে বাংলাদেশের ভূভাগে ওঠে আসে শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়টি। আমফানের প্রভাবে ফুঁসে ওঠেছে সাগর। প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল। দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্রান্তি লগ্নে সরকারি বেসরকারি সহ স্বেচ্ছাসেবী মহল এগিয়ে এসেছে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে।

দেশের উপকূলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে টানা ৩০ বছর ধরে সৈয়দ শাহ আলম ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসেন। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এলেই অন্যের জানমাল রক্ষায় নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন মানবসেবায়। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের থাবা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে গত দুই দিন তিনি নিরলসভাবে কাজ করেন।

গতকাল বুধবার (২০ মে ২০২০) সকালে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে মোংলা ও পায়রা নদীবন্দর এবং তৎসংলগ্ন জেলাসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। সকাল ৯টায় নিজের ছেলে ও দুইজন সহকর্মী স্বেচ্ছাসেবককে সঙ্গে নিয়ে বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে যান সৈয়দ শাহ আলম।

কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী নদীর ওপারে যান বাংলাদেশ সরকার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) টিম লিডার সৈয়দ শাহ আলম। সেখানে যাওয়ার পথে নৌকায় নদী পার হওয়ার সময় ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়েন। ডুবে যায় নৌকা। এতে মৃত্যু হয় সিপিপি টিম লিডার সৈয়দ শাহ আলমের।

নিহত সৈয়দ শাহ আলম জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোনদা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ কদম আলীর ছেলে বলে জানা গেছে।

লোনদা গ্রাম এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শরীফ বলেন, শাহ আলম মানবতার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহ বোধ করতেন। কখনও নিজের কথা ভাবতেন না। সব সময় মানুষের কথা ভাবতেন। শাহ আলম সব সময় মানবসেবাকে গুরুত্ব দিতেন। বিনা পারিশ্রমিকে গত ৩০ বছর যাবৎ মানবসেবা করতে গিয়ে সিপিপির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে আজকে তার মৃত্যু হলো। তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ রকম মানুষ সমাজে বিরল।

একই গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল মৃধা বলেন, শাহ আলম দাদু একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তার মতো মানুষ হয় না। তার মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এদিকে সৈয়দ শাহ আলমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিপিপি পরিচালক (অপারেশন) মো. নূর ইসলাম খান অসি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় যোদ্ধা সৈয়দ শাহ আলমের অকাল প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এদিকে  বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাসেদ (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।

এদিকে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চল। ইতোমধ্যে কয়েক শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলোর পয়েন্ট ভেঙে গেছে। জনপদে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। এদিকে পিরোজপুরে মজিবুর রহমান (৫৫) নামে একজন, ভোলায় সিদ্দিক ফকির ও রফিকুল ইসলাম  নামে দুজন, সাতক্ষীরায় মধ্য বয়সী এক নারী, পটুয়াখালীতে রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কাজ করা শাহ আলম নামে এক স্বেচ্ছাসেবী, যশোরে খ্যান্ত বেগম (৪৬) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩) নামে দুই জন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জোয়ারের পানিতে ডুবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন নামে এক যুবক ও বরগুনায় এক বৃদ্ধ সহ মোট  ১০  জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আমাদের বাণী ডট/২১ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।