আনোয়ার হোসেন আরিফ, (কুড়িগ্রাম) জেলা সংবাদদাতা; জেলায় করোনা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে সরকার সামাজিক দূরত্ব বা গণজমায়েত প্রতিরোধে সকল সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (জরুরি সেবা ব্যতীত) ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।

ছুটি ঘোষণার পর থেকেই কুড়িগ্রাম জেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে অনেক লোকের আগমন হয়। পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিলের পরিবর্তে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হলে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কুড়িগ্রাম জেলার খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের আগমন ঘটতে থাকে।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বারে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ১৯টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য তালিকা থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট প্রেরণ করা হয়। পুুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই ফ্রন্টলাইনে কাজ করে আসছে।

জেলার থানাসমূহে ১৩টি মোবাইল টিম ও ৭৩টি ইউনিয়নে অফিসারদের নিয়োগ করে ৭৩টি মোটর সাইকেল টহল ডিউটি পরিচালনা করা হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাট-বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেগুলো মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং প্রতিটি বাজারে এবং জনসমাগম হয় এমন স্থানে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে জনসমাগম ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে এবং গ্রামের মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালানো হয়। জেলার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলা পুলিশে কর্মরত অফিসার ও ফোর্সদের সার্বিক নিরাপত্তায় এ পর্যন্ত ২০০০টি সাবান, ৬৪৪০টি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ১২১৪২ জোড়া হ্যান্ডগ্লোফস ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন করা হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শুরু থেকেই পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রামের সকল অফিসার ও ফোর্সদের মাঝে ভিটামিন-সি, ডি ও জিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করেন এবং মেসে নিয়মিত দুধ ও কলা সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা পুলিশের অফিসার ও ফোর্সদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় পুলিশ সুপার নিজ উদ্যোগে মেসে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন এবং অফিসার ও ফোর্সদের মাঝে হটপট বিতরণ করেছেন। প্রতিটি ইউনিটে থার্মাল থার্মোমিটার প্রদান করেছেন এবং সকলের স্ক্রিনিং নিশ্চিত করাসহ সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। করোনা পরিস্থিতির ফলে লকডাউনকালীন সময়ে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সংকটে পড়ে যায়। খাদ্য সংকটে থাকা প্রায় ২৫০০ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ (চাল ১০ কেজি, ডাল এক কেজি, আটা পাঁচ কেজি, তেল এক লিটার, আলু তিন কেজি, লবণ পাঁচ কেজি) পৌঁছে দিয়ে খাদ্য সংকট নিরসনে সহায়তা করার পাশাপাশি দুর্ভোগে থাকা মানুষগুলোর মুখে হাসিও ফোটাচ্ছে জেলা পুলিশ।

জেলার বিভিন্ন স্থান হতে যখনই কোনো পরিবারের খাদ্য সংকটের মেসেজ পাচ্ছেন তখনই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে দিয়ে সেই পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রাম।

প্রতি রাতে ৪০-৫০টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রামের ফেসবুক পেজে যে যখন যেকোনো স্থান থেকে সাহায্যের জন্য মেসেজ দিলে সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়।

বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছেন এবং তার অধিনস্থদের নিয়মিত তদারকি করার নির্দেশ প্রদান করেন।

যার ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম জেলায় এখনো যারা ত্রাণ সহায়তা পাননি তাদের তালিকা অনুযায়ী নিজেও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

পুলিশ সুপার করোনার বিরুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত ১৪৯ জন ডাক্তার ও ৯ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শুভেচ্ছা উপহার দেন। যার মাধ্যমে জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের বাণী ডট কম/১২  জুলাই  ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।