আনোয়ার হোসেন আরিফ, কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা;  জেলায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

এ অবস্থায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। যাদের ঘর-বাড়িতে বিছানাপত্র সবকিছুই তলিয়ে গেছে তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। আর যাদের কোন রকমে থাকার উপায় আছে তারা কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যার পানির মধ্যে ঘর-বাড়িতেই অবস্থান করছেন। পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ এবং খোলা আকাশের নীচে পলিথিনের তাবু টানিয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলো অব্যাহত বৃষ্টিতে কষ্ট করে জীবন-যাপন করছে।

বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় দুই সপ্তাহের বন্যার সময়ও কিন্তু তারা পানিবন্দি জীবন-যাপন করেছে। দ্বিতীয় দফার বন্যার কবলে পড়া কর্মহীন এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট চরম আকার ধারন করেছে। একদিকে পানির কারণে চুলায় আগুন জ্বালাতে না পাওয়া অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষজন। এসব এলাকার কাঁচা পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আইড়মাড়ীর চরের আব্দুর রহিম জানান, গত বন্যায় ঘরে যা শুকনো খাবার ছিল তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সেই বন্যা যেতে না যেতেই আবারও বড় বন্যা আসলো। এখনও ঘরের ভিতর বিছানা উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে অবস্থান করছি। চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। সবকিছুই পানিতে ভিজে গেছে। খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্ট করে আছি। পানি আরো বাড়লে উঁচু জায়গায় যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবো সেটাও জানা নেই।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার বাঁধে আশ্রয় নেয়া সাহের আলী জানায়, বাড়িতে আর থাকার উপায় নাই। সোমবার গরু, ছাগল, বউ, বাচ্চা নিয়ে নৌকায় করে এখানে উঠেছি। এখানেও খুব কষ্ট। গতরাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। পলিথিনের ভিতর শুয়ে থাকার অবস্থা নেই। সারারাত বসে কাটিয়েছি। খাওয়া-দাওয়ার কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত মেম্বার ও চেয়ারম্যান কোন সহযোগীতা করে নাই।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এই বন্যা দুর্গত মানুষদের হাতে দীর্ঘদিন তেমন কাজ না ছিল। তার উপর প্রথম দফা বন্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবারো বন্যা আসলো। চরে বসবাসকারী বেশিরভাগই অভাবি মানুষ। মূলত এই দিন মজুর শ্রেনীর মানুষেরাই খাদ্য সংকটে পড়েছে। এদের এই মুহুর্তে শুকনো খাবারের প্রয়োজন।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের ৪ হাজার পরিবারের ২৮ হাজার মানুষই পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। ২য় দফা বন্যায় জেলা প্রশাসন থেকে আমার ইউনিয়নের জন্য ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বুধবার উত্তোলন করে বিতরণ করা হবে। এই ৫ টন চাল ১০ কেজি করে মাত্র ৫০০ পরিবারকে দেয়া সম্ভব হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম আমাদের বানী জেলা সংবাদদাকে জানান, জেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৯ উপজেলায় ১৬০ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবারের জন্য ৪ লাখ জিআর ক্যাশ, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ, গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৬ টার রিপোর্ট অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আমাদের বাণী ডট কম/১৫ জুলাই ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।