২০১২ সালের জুন মাসে মিসরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি মৃত্যুবরণ করেছেন। ৬৭ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ১৭ জুন আদালতে শুনানি চলাকালে এজলাসেই মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। এরপর থেকেই তাকে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল।

মোহাম্মদ মুরসির পুরো নাম মোহাম্মদ মুরসি ইসা আল-আইয়াত। তিনি ১৯৫১ সালের ২০ আগস্ট মিসরের শারকিয়া প্রদেশের আল-আদওয়াহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অনেকটা গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ছিলেন একজন সাধারন কৃষক ও মা ছিলেন গৃহিনী। তার ছোটবেলাটা অনেকটা অভাব অনটনের মধ্যেই কেটেছে। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে সাধারণ কৃষকের ছেলে থেকেই পরবর্তীতে হন প্রেসিডেন্ট মুরসি।

স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করার পর নিজের মেধার জোরে ১৯৭৫ সালে মোহাম্মদ মুরসি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রকৌশল) বিষয়ে স্নাতক পড়া শুরু করেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৮২ সালে পিএচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

এরপর তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৯৮২-৮৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি নাসায় কাজ করার সুযোগ পান এবং সেখানে তিনি সুনামের সাথে স্পেস শাটল ইঞ্জিন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০০০ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরসি। সে সময় রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ থাকায় মোহাম্মদ মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচিত হন।

পরে ২০১১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডের আদলে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) গঠন করে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুরসি। ২০১২ সালে মিসরে দুই পর্বে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পর্বে সর্বমোট ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গণতান্তিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড. মোহাম্মদ মুরসি।

তিনি ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে জয়ী ঘোষণার পর মুসলিম ব্রাদারহুড ও এফজেপি থেকে মোহাম্মদ মুরসিকে অব্যাহতি দিয়ে মিসরের সর্বস্তরের মানুষের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।