ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসে মাগুরায় এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাগুরা সদর উপজেলার বারাশিয়া গ্রামে গত রোববার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এবার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরী (২০) গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন যুবককে আটক করেছে।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ঢাকা টু মেঘনায় চলাচলরত স্বদেশ পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে এক কিশোরী যাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে বাসের চালক। এ সময় কিশোরীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন বাস থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং চালক শামীমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
মাগুরা সংবাদদাতা ,
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মিরপুরের একটি ফ্ল্যাটের সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী ও তার স্বামী। একই বাসায় ভাড়া থাকার সুবাদে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের। সেই সুবাদেই ঈদুল-ফিতরে মাগুরায় বেড়াতে আসেন ওই নারী।
শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে বাড়ির বাইরে আসেন তিনি। এ সুযোগে স্থানীয় লিটু মোল্যা (২৭), রেজোয়ান মোল্যা (২১) ও শামিম বিশ্বাস (২১) তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি পাটখেতে গণধর্ষণ করেন।
এসময় ধর্ষণের নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে লিটু মোল্যা ওই নারীর স্বামীর কাছে ফোনে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এছাড়া চাঁদার টাকা না দিলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন লিটু মোল্যা।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরী (২০) গণধর্ষণের ঘটনার পরপরই থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন যুবককে আটক করেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলসহ আলাদা স্থান থেকে জামরুল (২৮), হুমায়ুন (২৩) ও কাজল (৪৫) নামে তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সোমবার ওই কিশোরী একই ইউনিয়নের আউজহাটি শিবপুর গ্রামের ফুফুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিকাল তিনটার দিকে সাখরা গ্রামের কাছে পৌঁছলে চার যুবক মিলে মেয়েটিকে প্রথমে স্থানীয় একটি জঙ্গলে এবং পরে পুবাইল গ্রামের মুন্নাফ মিয়ার গোয়াল ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বিকালেই নেত্রকোনার সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (কেন্দুয়া সার্কেল) মাহমুদুল হাসান ও কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একই ইউনিয়নের চন্দলাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে কাজল (৪০),আব্দুর রহমানের ছেলে হুমায়ূন (২৫) ও রইছ উদ্দিনের ছেলে জামরুল (২৮)নামে তিন যুবককে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ধর্ষিতা কিশোরীকে মঙ্গলবার সকালে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সোমবার রাতে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা নিউটাউনের সামনে চলন্ত বাসে এক কিশোরী যাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টারঘটনা ঘটে। আটক শামীম মিয়া সোনারগাঁ উপজেলার নানাখি মধ্যপাড়া গ্রামের আঃ রব ভূইয়ার ছেলে। ওই কিশোরীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। সে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে এক ব্যক্তির বাড়ির ভাড়াটিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা নিউটাউন শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে রাত সাড়ে দশটায় মার্কেটের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন সময় ঢাকা টু মেঘনায় চলাচলরত একটি স্বদেশ গাড়ি দেখে থামাতে বললে গাড়িটি আরও দ্রুতবেগে ছুটে যেতেই বাস থেকে এক কিশোরীর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পায়। কিশোরীর চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে গাড়ির সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। গাড়ি থামানোর পর স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা গাড়িতে উঠে দেখতে পায় হেলপার গাড়ি চালাচ্ছে আর চালক শামীম এক কিশোরী যাত্রীকে ধর্ষণের জন্য বাসের সিটে শুইয়ে রেখেছে। পরে বাস চালককে মারধর করে সোনারগাঁ থানা পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের হাতে সোপর্দ করা হয়। এসময় গাড়ি চালক ও স্বদেশ পরিবহনের বাসটি যার নং- (ঢাকা মেট্টো-ব-১১-৭২৬৫) আটক করে সোনারগাঁ থানায় নিয়ে যায়।
সূত্র আরও জানান, ওই কিশোরী ঈদের ছুটি শেষে সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া থেকে মেঘনা যাওয়ার জন্য স্বদেশ পরিবহনের বাসটিতে উঠে। তখন বাসটির চালক মোগড়াপাড়ায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দিলেও তাকে মেঘনায় নামিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু বাসের চালক শামীম গাড়ির সিট ঠিক করার কথা বলে হেলপাড়কে গাড়ি চালানোর কথা বলে এবং গাড়ি আস্তে আস্তে চালাতে বলে। একপর্যায়ে গাড়িটি মেঘনা ব্রিজের নিচে নিয়ে ঘুরাতে থাকে আর কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
নিউটাউনের ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন জানান, বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে আমরা বাসের সামনে মানব দেয়াল তৈরি করি। বাসে উঠে ধর্ষণ চেষ্টাকারী চালককে আটক করি। এ সুযোগে হেলপার পালিয়ে যায়। আমরা আনন্দিত যে অন্তত একটি ধর্ষণ রুখতে পেরেছি। এমনও হতে পারতো ধর্ষণ শেষে মেয়েটিকে হত্যা করে ফেলে যেত।
এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ধর্ষণের চেষ্টার সময় স্থানীয় জনতা কিশোরীকে রক্ষা করে বাসচালক শামীমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় বাসের চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় মামলা প্রস্তুতি চলছে।