ডেস্ক রিপোর্ট; গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হামিদা খাতুন মাধ্যমিক ও (এসএসসি) ভোকেশনাল স্কুলের ঘটনা। প্রতিষ্ঠান থেকে সহকারী শিক্ষককে তাড়াতে ‌‘কুবুদ্ধি’ আঁটেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক।

তবে সত্য উদঘাটনের পর শেষ রক্ষা হয়নি প্রতিষ্ঠানপ্রধান সাহানা আকতারের। ফলাফল, প্রধান শিক্ষকের এমপিও সাময়িক বন্ধ ও তার অবৈধ পন্থা অবলম্বনের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও-সংক্রান্ত গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ভুক্তভোগী কৃষি শিক্ষক মো. আনারুল ইসলামের এমপিও পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি সাহানার বিরুদ্ধে ম্যানিজিং কমিটিকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

শিক্ষককে মৃত দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সাহানা আকতার বলেন, ‘আমি মৃত ব্যক্তি দেখাইনি। তিনি আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকই নন।’

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হলে আমি কী করবো? তিনি আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকই নন। তদন্ত হওয়ার পর তার নাম কর্তন হয়েছে। আমি টিচার হিসেবে তাকে গ্রহণ করিনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মু. মাহমুদ হোসেন মন্ডল বলেন, ‘কৃষি শিক্ষককের নিয়োগ ও এমপিও বিধিসম্মত। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক। আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলাম।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হামিদা খাতুন মাধ্যমিক ও (এসএসসি) ভোকেশনাল স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয় ২০০০ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের কৃষি শিক্ষক আনারুলকে মৃত দেখিয়ে এমপিও-তালিকা থেকে নাম কাটানোর পর পুনরায় এমপিওভুক্তির আবেদন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তদন্তের মতামত অংশে বলা হয়, এমপিও-তালিকা থেকে আনারুলের নাম বিধিবহির্ভূতভাবে কর্তন করা হয়েছে। সুতরাং তার নাম পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করা হলো। আর হয়রানিমূলকভাবে নাম কর্তনের প্রস্তাব করায় প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

কৃষি শিক্ষক আনারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপিওভুক্তির পর প্রধান শিক্ষক ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি তা দিইনি। এর কয়েক মাস পর আমার এমপিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক আমাকে মৃত দেখিয়ে এমপিও-তালিকা থেকে নাম কর্তনের সুপারিশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে। আমি এসব ঘটনায় উচ্চ আদালতে যাই।’

ছয় লাখ টাকা না দিতে পারায় কৃষি শিক্ষকের এমপিও তালিকা থেকে নাম কর্তনের সুপারিশ করার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটার প্রমাণ কী? মুখে অনেক কিছুই বলা যাবে।’

প্রধান শিক্ষকের সুপারিশ ছাড়া কীভাবে কৃষি শিক্ষকের এমপিওভুক্তি হয়—এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অন্য স্কুলের এক শিক্ষক মাউশিতে যোগাযোগ করে এমপিও করিয়েছেন। এই শিক্ষক ভুয়া নিয়োগে ইএমআইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে এমপিওভুক্ত হন।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও সাহানার স্বামী আমিনুল ইসলাম মতিয়ার বলেন, ‘ওই শিক্ষকের (আনারুল) নিয়োগ অবৈধ ও এমপিও জাল। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। মামলার মাধ্যমে এটি ফয়সালা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।