ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  যোগদানের একদিনের মাথায় দু’জন হেভিওয়েট কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছেন সদ্য যোগ দেয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে নগরবাসী।

এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরেই সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ডিএসসিসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করেছেন এ দু’জন কর্মকর্তা। এ সময়ে তারা নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথেও জড়িত হয়ে পড়েছিলেন বলে ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

গত ১৬ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএসসিসির মেয়র পদে যোগ দেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর একদিন পরই ১৭ মে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান এবং উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে থাকা ইউসুফ আলী সরদারকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ জারি করেন মেয়র। এ ঘটনায় নগর ভবনে তোলপাড় চলছে। আরো অনেক কর্মকর্তা ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছেন। যেকোনো সময় তাদের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, মো: আসাদুজ্জামানের চেয়ে সিনিয়র অনেক কর্মকর্তা থাকলেও সবাইকে ডিঙ্গিয়ে তাকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এর পর থেকেই আর্থিক গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ তার ওপর ন্যস্ত করা হয়। ডিএসসিসিতে একজন প্রধান প্রকৌশলী থাকলেও তিনি নামেমাত্র প্রধান ছিলেন। সব কাজ করতেন মো: আসাদুজ্জামান। সরকারের মেগা প্রকল্প, জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পের অধীনে ডিএসসিসি এলাকায় ১৯টি পার্ক ও ১১টি খেলার মাঠ উন্নয়ন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন সব ধরনের উন্নয়ন কাজের প্রধান ছিলেন আসাদুজ্জামান।

ঠিকাদারকে এসব কাজ পেতে ঘুষ দিতে হতো। যার পার্সেন্টেজ আকারে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পকেটেও যেত বলে ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা জানান, ডিএসসিসিতে উন্নয়নমূলক কাজ মানেই কর্মকর্তাদের পকেট ভর্তির সুযোগ। এ কারণে অনেক ঠিকাদার তার প্রতি রুষ্ট ছিলেন। অনেক কর্মকর্তাও তাকে আড় চোখে দেখতেন। তবে মেয়রের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বারবারই তিনি উৎরে গেছেন।

মো: আসাদুজ্জামানের মতোই মেয়র সাঈদ খোকনের আস্থাভাজন ছিলেন উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (বাজার সার্কেল) মো: ইউসুফ আলী সরদার। এ কারণে সে সময় প্রেষণে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদে থাকা মো: নুরুজ্জামান বদলি হলেই ইউসুফ আলী সরদারকে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেন মেয়র। এরপরই মেয়রের নানামুখী কাজে জড়িয়ে যান তিনি। রাজস্ব বিভাগের কাজ ছাড়াও মেয়র তাকে কেনাকাটার বিভিন্ন কাজেও নিয়োজিত করেন। এ ছাড়া গত মেয়রের আমলে বেশ কয়েকটি মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রেও মেয়রের চাহিদা অনুযায়ী সরকারি দলের নেতাদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। ফলে লটারিতে অংশ নেয়া সাধারণ লোকজন বঞ্চিত হন। তা ছাড়া গত মেয়রের আমলে বেশ কয়েকটি মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দিলেও একটি মার্কেটও আলোর মুখ দেখেনি।

এ ছাড়া ডিএসসিসির চলমান মার্কেটগুলোতেও বিধিবহির্ভূতভাবে দোকান বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ রাজস্ব বিভাগে নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মো: আসাদুজ্জামান ও ইউসুফ আলী সরদার কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, মূলত তারা সব কাজই করেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে। তারা সাবেক মেয়রের আস্থাভাজন ছিলেন। এ কারণে বর্তমান মেয়র ও সাবেক মেয়রের রেষারেষির শিকার হয়েছেন তারা।

আমাদের বাণী ডট কম/১৮ মে ২০২০/ডিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।