বড় নাম, তাই বেতনও বেশি। জাতীয় দলের নতুন স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরির কথাই বলা হচ্ছে। কোচদের আন্তর্জাতিক বাজারে কিউই এই সাবেক অলরাউন্ডারের চাহিদা আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট যুগে ডাগআউটে তার মতো একজন কিংবদন্তি থাকলে বাজারটাও ভালো জমে। যে কারণে চড়া সম্মানী দিতে হয় ভেট্টোরির মতো নতুন কোচকেও। বিসিবিও মোটা অঙ্কের সম্মানী দিয়ে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাকে।

ক্রিকেটপাড়ার গুঞ্জন, দিনে প্রায় পাঁচ হাজার ডলার (চার লাখ বিশ হাজার টাকা) সম্মানী নেবেন তিনি। একশ’ দিনে প্রায় পাঁচ লাখ ডলার। নাম গোপন রাখার শর্তে বিসিবির একজন পরিচালক জানান, ভেট্টোরি বড় ক্রিকেটার ছিলেন, তবে কোচ হিসেবে পরীক্ষিত নন। যেটা শুনছি, একশ’ দিন কাজ করলে পাঁচ লাখ ডলার সম্মানী নেবেন তিনি।

ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হলে এই টাকা ঠিক ছিল। কিন্তু একটা জাতীয় দলের স্পিন কোচ হিসেবে সম্মানীটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানান, ভেট্টোরিকে অত বেশি সম্মানী দেওয়া হচ্ছে না।

বিসিবির বেশিরভাগ পরিচালকই জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফের বেতন সম্পর্কে জানেন না। তাই পরিচালকদের অধিকাংশই ভেট্টোরির সম্মানী নিয়ে ধোঁয়াশায়। যেমন পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বলছেন, একশ’ দিনে দুই লাখ ডলার দেওয়া হবে ৪০ বছর বয়সী এ স্পিন কোচকে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাকি কোচদের মতোই পাবেন। বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী নতুন স্পিন বোলিং কোচের প্রকৃত বেতন সম্পর্কে বলতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, ‘ভেট্টোরিকে বাজারমূল্যের চেয়েও কম সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। অবশ্যই সেটা দিনে পাঁচ হাজার ডলার না। তিন লাখের চেয়েও কম দেওয়া হচ্ছে।’

একশ’ দিনে তিন লাখ হলে দিনে তিন হাজার ডলার সম্মানী। বাকি সুযোগ-সুবিধা এবং বোনাস মিলে সেটা পাঁচ হাজার ডলার হতেও পারে। তবে ল্যাঙ্গেভেল্টের বেতন প্রায় ১৫ হাজার ডলার বলে জানা গেছে। সাবেক পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশও ১৫ হাজার ডলার বেতন পেতেন বিসিবি থেকে। তবে বাংলাদেশের কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন নিয়েছেন সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, মাসে ২৬ হাজার ডলার।

কোচিং স্টাফের বেতন কেন পরিচালকদের জানানো হয় না, সেটা বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে পরিচালকদের কথায় ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গেল। নাম গোপন রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চুক্তির ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি প্রকাশ করা উচিত। গত সভায় পেস ও স্পিন বোলিং কোচের নাম জানালেন বোর্ড সভাপতি; কিন্তু তাদের পেছনে কত টাকা ব্যয় হবে? কার বেতন কত? এই তথ্যগুলো আমাদের দেওয়া হয়নি। আমি মনে করি, পরিচালনা পর্ষদের এগুলো জানার অধিকার আছে। শুনেছি, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে তিন মাসের বেতন দিতে হয়েছে। সে চাকরি ছেড়ে গেল, অথচ তাকে তিন মাসে ৮০ হাজার ডলারের মতো বেতন দিয়ে দিলাম।’

বিসিবির সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদে চুক্তি করার সময় চন্ডিকা শর্ত দিয়েছিলেন, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও তিন মাসের বেতন দিতে হবে তাকে। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান তার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করলে তিন মাসের বেতন দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু কেউ চাকরি ছেড়ে গেলে বেতন পাওয়া বিরল ঘটনা।

পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো বিসিবিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে, কোচ চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও বেতন দিয়ে গেছে তিন মাস। তবে স্টিভ রোডসকে নিয়োগ দেওয়ার সময় চুক্তিতে এমন ভুল আর হয়নি। যে কারণে রোডসকে সহজেই বিদায় করে দেওয়া গেছে।

এই ইস্যুগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বোর্ডসভায় উন্মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত কি-না জানতে চাওয়া হলে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘আমি মনে করি, যে কোনো বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকা ভালো। বোর্ডসভায় জিনিসগুলো জানাতে পারত।’ বিসিবির মুখপাত্র হলেও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস পর্যন্ত জাতীয় দলের নতুন নিয়োগ পাওয়া পেস ও স্পিন বোলিং কোচের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানেন না। ভেট্টোরির বেতনের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি, ‘এত টাকা বেতন হতে পারে না। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, তাকে আসলেই কত টাকা সম্মানী দেওয়া হবে।’

বিশ্বকাপ চলাকালে ভেট্টোরিকে বিসিবির চাকরি প্রস্তাব দেন সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এজেন্টের মাধ্যমে ভেট্টোরির নিয়োগ হয়নি। আমি সরাসরি কথা তাকে ঠিক করেছি। বছরে ৬০ দিন কাজ করতে চেয়েছিল সে। পরে একশ’ দিনের জন্য রাজি করা গেছে।’ পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন পরিচালকের মাধ্যমে। গুঞ্জন আছে কোচ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে এজেন্সি কমিশন নিয়ে থাকেন পরিচালকরাও। এই কমিশন বাণিজ্যকে বৈধ মনে করেন পরিচালকদের অনেকেই।

এদিকে, স্পিন আর পেস বোলিং কোচ নিয়োগ দেওয়া গেলেও প্রধান কোচের বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। জালাল ইউনুস জানান, ‘পুরো সময়ের জন্য প্রধান কোচ পাওয়া যাচ্ছে না। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’ সিইও নিজামউদ্দিন বলেন, ‘ভারতের কোচ হওয়ার দৌড়ে আছেন অনেকে। ভারত কোচ নিয়োগ দেওয়ার পর আমরা জোরেশোরে নামব। অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা হয়ে আছে। আমরা পূর্ণ সময়ের জন্য কোচ চাই, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতিও রয়েছে।’ এই দৌড়ে মাহেলা জয়াবর্ধনেও ছিলেন। সিইও জানান, মাসে ৫৫ হাজার ডলার চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শর্ত দিয়েছিলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের জন্য ছাড় চান তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।