ঠাকুরগাঁও জেলায় মাত্র ৫ শত টাকা চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সৎ ভাইয়ের পেটে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ,মামুন বাদশা নামে এক সাবেক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে।

ছুরিকাঘাতে আহত রবিউল ইসলাম (২০) বর্তমানে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার রাত ১১টায় রবিউলের মা আনোয়ারা বেগম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ অভিযোগ করেন। এর আগে একই দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত রবিউল ইসলাম ঐ মুক্তিযোদ্ধার ৩য় স্ত্রীর ছেলে।

এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর শুক্রবার রাতেই বালিয়াডাঙ্গী থানায় রবিউলের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে মামুন বাদশা ও তার মা মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রধান আসামী পুলিশ কনস্টেবল মামুন বাদশা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দীনের ছেলে। তিনি দিনাজপুর জেলার কাহারোল থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরীতে ছিলেন। স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় রায়ে চাকুরীচ্যুত হয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

এজাহার ও বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিন ধরে লেগেই আছে ঐ মুক্তিযোদ্ধার ২য় এবং ৩য় স্ত্রীর সন্তানদের মাঝে। এর আগে গত ৬ মাস আগে অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ কনস্টেবল রবিউলের মা আনেয়ারা বেগমের হাত ভেঙ্গে দেন। ঐসময় মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দীন নিজেই বাদী হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। ২৯ নভেম্বর শুক্রবার রাতে এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, পুলিশে কর্মরত থাকাবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন মামুন বাদশা। প্রথম স্ত্রী তার উপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা আনয়নের পর পুলিশ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। এরপর থেকে এলাকায় এসে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

মামলায় হাজিরা দিতে এ পর্যন্ত ৩টি নোটিশ করা হলেও তিনি হাজির না হওয়ার কারণে মামলা রায় হয়ে গেছে বলে থানা পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে বাবার দায়ের করা মামলাও চলমান। আহত রবিউল ইসলামের অভিযোগ, ২৯ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে লাহিড়ী বাজারে মোবাইল কেনার জন্য টাকা কম হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা বাবার নিকট পাঁচশত টাকা ধার নেন তিনি। সেই ধারের টাকা বাড়ীতে গিয়ে পরিশোধ করার কথা। বাবার পরিবর্তে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার নিকট ধারের টাকা চাইতে আসে মামুন বাদশা। এতে বাধে দ্বন্দ। এক পর্যায়ে ছুড়ি দিয়ে রবিউলের পেটে আঘাত করে মামুন বাদশা। নেশাগ্রস্ত সাবেক পুলিশ কনস্টেবল যে কোন এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশংকা করে রবিউল তার দৃষ্ট্রান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

রবিউলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, মোর স্বামীর ৩টা বউয়ের ঘরত ৮টা ছুয়া। প্রথমটার ১ জন, দ্বিতীয়টার ২জন, মোর ৫টা। সবাই মিলে মোর ছুয়ালার পিছনত লাগেছে, মোর হাত ভাঙেও শান্তি হয়নি বাদশা’র। এইবার মোর ছুয়াডাক মারে ফিলাবা চাহিজিল। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীডা এতলা হবার পরও মামলা করবা দিবেনি। মোবাইলডাত বার বার গাল দিছে।

মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দীন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমনটা হয়েছে। এর আগেও আমার স্ত্রী আনোয়ারাকে মারপিট করেছি বাদশা, সেই মামলার তিনি বাদী উল্লেখ করে বলেন, মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে বাদশা মাদকসক্ত কিনা সেটা আমার জানা নেই। স্ত্রীর করা মামলায় সে চাকুরীচ্যুত, বর্তমানে বাসাতেই থাকেন বলে জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান,পারিবারিক কলহে সৃষ্ট ঘটনায় শুক্রবার রাতে একটি মামলা নেয়া হয়েছে। মামলা ২ আসামী মামুন বাদশার মা মনোয়ারা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। অপর আসামী বাদশাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর চেষ্টা চালাচ্ছেন। মামুন বাদশার বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।