শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে চাই না, গেলেও পড়াশোনায় তাদের মন থাকে না। সরকারের তরফ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ নয়। ফলে বহু পরিবারের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে পড়াশোনার প্রতি। জীবন-জীবীকার তাগিদে কাজের সন্ধ্যানে ছুটছে শিশুরাও।

ঠাকুরগাঁও জেলায় এ রকম বহু সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় মানুষের অভাব, দরিদ্রতা তাদের কতটা পিছিয়ে দিতে পারে বাস্তবেতা না দেখলেই নয়। এই জনপদের অনেক পরিবারের ইচ্ছা সত্তেও সন্তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পারছে না। আবার শত অভাবের মধ্যে থেকেও যেসব বাবা-মা সন্তানকে স্কুলে পাঠান, তাদের সন্তানেরা পড়াশোনায় ঠিকমতো মন দিতে পারে না। স্কুলের বেঞ্চে গিয়ে বসে ঠিকই, শিক্ষক কি শিক্ষা দিচ্ছেন সেদিকে যেন শিশুদের মনই নেই। থাকবেই বা কী করে! সে যে আধপেটা কিংবা অনাহারি। ইতোমধ্যে সরকার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শির্ক্ষাথীদের দুপুরের খাবারের ঘোষণা দিয়ে যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

যা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে নিশ্চিত। বিদ্যালয়ে খাবার পেলে শিক্ষার্থীদের আর সময় নষ্ট হবে, থাকবেনা খাদ্যের চিন্তা। শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করতে উপকারী খাবারগুলোই ওদের হাতে পৌছে দিতে কাজী ফার্মস গ্রুপ ২০১০ সাল থেকে সিএসআর প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিস্কুট দিয়ে টিফিন প্রোগাম চালু করে। এ কার্যক্রমের কিছুটা উন্নতি ঘটিয়ে ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষকসহ সকল শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে শনিবার-বুধবার টিফিনে দুইদিন সিদ্ধ ডিম ও দুইদিন কলা পাউরুটি দেওয়া শুরু করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শ্রী কৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওগাঁও ছেপনাইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরগঞ্জ উপজেলার হাবিবপুর ও চোপরাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই টিফিন প্রোগাম চালু আছে। বর্তমানে দুই উপজেলার মোট ৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫শ ২০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে কাজী ফার্মস গ্রুপ সিএসআর প্রোগামের টিফিন প্রোগাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

কাজী ফার্মস গ্রুপের পঞ্চগড় রিজিওনের সিএসআর প্রোগ্রামের সহকারী ব্যবস্থাপক লাইছুর রহমান বলেন, সারা দেশে সকল সুবিধাবঞ্চিত বিদ্যালয় বা এলাকায় এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ণ সম্ভব হলে শিক্ষার মান অনেকটা বদলে যাবে । দূর হবে শিশুর পুষ্টিহীনতা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া কমবে। সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে আগামীর ভবিষ্যৎ। সৃজনশীল মানুষ হিসেবেই আজকের শিশু আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। কাজী ফার্মস গ্রুপের পঞ্চগড় রিজিওনের সিএসআর প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঠাকুগাঁওয়ে ৪ টি ও পঞ্চগড়ে ১ টি মোট ৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে দুইদিন সিদ্ধ ডিম ও দুইদিন কলা পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে।

সদর উপজেলার শ্রীকৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুফেদা বেগম বলেন, দুপুরে খাবার দেওয়ায় শিক্ষর্র্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগি হচ্ছে। এতে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম যাচ্ছে। শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি কাজী ফার্মস থেকে পাওয়ায় অনেক খুশি। বিদ্যালয়ে টিফিনের ব্যবস্থা থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে খাবার আনার ঝামেলা থাকে না। পীরগঞ্জ উপজেলার হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন নেছা বলেন, কাজী ফার্মসের টিফিন প্রোগাম চালুর আগে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অর্ধেকের কম। বর্তমানে সব শ্রেণীতেই ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।

হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে কাজী ফামর্সে একটি হ্যাচারী আছে। আমরা এলাবাসী ২০০৯ সালের দিকে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ের শির্ক্ষীদের জন্য টিফিনের দাবী জানায়। পরে ২০১০ সালে কাজী ফার্মস বিস্কুট দিয়ে টিফিন প্রোগাম চালু করে। বর্তমানে শিক্ষকসহ সকল শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে শনিবার-বুধবার টিফিনে দুইদিন সিদ্ধ ডিম ও দুইদিন কলা পাউরুটি দিচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা র্কমর্কতা নিত্যনান্দ দাস বলে, যে সকল বিদ্যালয়ে কাজী ফার্মস গ্রুপের টিফিন প্রোগ্রাম চালু আসে সে সকল বিদ্যালয়ে অন্য বিদ্যালয়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভাল। ইতোমধ্যে সরকার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের দুপুরের খাবারের ঘোষণা দিয়ে একাটি যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা বাস্থবায়ন হলে শিক্ষার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে ঝরেপড়া রোধ হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।