ডেস্ক রিপোর্ট; চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার এসএস খালেদ রোডের বাসিন্দা লতিফা আনসারী রুনা। প্রতি মাসে তার বিদ্যুৎ বিল আসে তিন হাজার টাকার মধ্যে। গত মাসেও বিদ্যুৎ বিল এসেছিলো তিন হাজার টাকা। কিন্তু এ মাসে বিদ্যুৎ বিল দেখে তিনি অবাক। প্রায় ৪ গুণ বেড়ে বিদ্যুৎ বিল আসলো ১১ হাজার ৬৪৫ টাকা।

  • অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন-

‘করোনায় মরতে হবে না আমার। বিদ্যুৎ বিল দিয়েই আমার মতো মধ্যবিত্তের মরতে হবে।…১১ হাজার ৬৪৫ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হলে আমার এ মাসে না খেয়ে মরতে হবে। এসব অনিয়মের কথা কার কাছে বলি…।

  • লতিফা আনসারী রুনা বলেন, বাসায় একটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ফ্রিজ, টিভি ও কয়েকটি ফ্যান চলে। এসি দিনে রাতে মিলে ২ ঘণ্টার বেশি চলে না। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল আসার কথা ৩ হাজার টাকা। গত মাসেও ৩ হাজার টাকা বিল এসেছে। কিন্তু এ মাসে ১১ হাজার ৬৪৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এমন দুঃখের কথা কাকে বলি?

তার চেয়েও বেশি জটিলতায় পড়েছেন চকবাজারের বাসিন্দা মুজিবুল হক। তিনি একটি বেসরকারি এনজিওতে কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ৩ মাস বাসায় তিনি। অফিস থেকে বেতনও ঠিকমতো পাচ্ছেন না মুজিবুল হক। এর মধ্যে গত কয়েকমাস ধরে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল আসছে তার।

  • তিনি বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে চার সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছি। কিন্তু এ রকম বিদ্যুৎ বিল কখনো আসেনি। গত কয়েকমাস ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল আসছে। বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল এগুলো দিতে দিতে জমানো টাকাও প্রায় শেষ। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, কাকে অভিযোগ দেবো।

‘অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও তারা কোনো পাত্তাই দেন না। ঠিক হয়ে যাবে বলতে বলতে দুই মাসেও ঠিক হয়নি।’

  • শুধু নগরে যে এই চিত্র, তা নয়। নগরের বাইরের উপজেলাগুলোতেও একই অভিযোগ। বিশেষ করে চন্দনাইশ, হাটহাজারী, পটিয়া, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে অভিযোগ বেশি আসছে।

সাতকানিয়ার জসিম উদ্দিন নামে এক দোকানি বলেন, দোকানে একটি বাতি জ্বালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিল আসছে। অথচ অন্যসময় ১০০ টাকার বেশি আসতো না।

  • হাটহাজারীর ফতেপুর এলাকার লতিফপাড়ার বাসিন্দা সামিউল আলম জানান, প্রতিমাসে গড়ে তাদের ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিল আসলেও এ মাসে বিল এসেছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

অক্সিজেন এলাকার ছিপাতলির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার তালুকদার বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১ হাজার ৫০৫ টাকা, এ মাসে ১ হাজার ৫৭১ টাকা। কিন্তু করোনার আগে বিদ্যুৎ বিল আসতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

  • অভিযোগের বিষয়ে হাটহাজারীর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের বলেন, গত দুই মাসে রিডিং সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ বিল এসেছে গ্রাহকদের। আমাদের কাছে যারা আসছেন তাদের ঠিক করে দিচ্ছি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল আসার বিষয়ে কয়েকজন অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা চেক করে দেখেছি যে বিদ্যুৎ বিল আসছে তা ঠিক আছে। তারপরও কেউ যদি অভিযোগ দেন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি।

  • তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকছে। গরমের সময় ফ্যান বা এসিও বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিন্তু বাসায় বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের বিল একটু বেশি আসবে।

আমাদের বাণী ডট কম/২২  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।