নিজস্ব সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া; জেলার নবীনগর উপজেলায় ঘর থেকে বের হলেই পুলিশের ধাওয়া আর লাঠিচার্জ। তাই গত চার দিন ধরে সদরের উত্তর পাড়ার ভ্যানচালক নূরু মিয়া ঘর থেকে আর বের হচ্ছেন না।

এ অবস্থায় দু’দিন হলো তার ঘরে রান্নার চুলাও জ্বলছে না। এরই মধ্যে রোববার রাতে এক বছরের শিশু পুত্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসাও করাতে পারছিলেন না।

অপরদিকে, সদরের তহশিল অফিসের মোড়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে সারাদিন পান সিগারেট বিক্রি করে সংসার চালাতেন খোকন দাস। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশের পিটুনীর ভয়ে তাকেও গত চার দিন ধরে ঘরে বসে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

এদিকে, পান সিগারেট বিক্রি বন্ধ থাকায় টাকার অভাবে ঘরে অসুস্থ গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। এ অবস্থায় চাল, ডাল আর কিছু টাকা যোগাড়ের জন্য দুদিন ধরে পথে পথে ঘুরেছেন অসহায় খোকন দাস।

উপজেলা সদরের এ দুটি মানবিক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নবীনগর উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম।

পরে খোঁজ নিয়ে দুটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে অসহায় ওই দুই পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আসা মানবিক কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল, দুই কেজি করে ডাল, আটা, তেল, পেঁয়াজ, আলু, দুটি সাবান ও আনুষাঙ্গিক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করেন। পরে আরও ২২টি দরিদ্র পরিবারের মাঝে এই মানবিক সাহায্য বিতরণ করা হয়। এ নিয়ে গত ৪ দিনে মোট ৬০টি দরিদ্র পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয় বলে জানান ইউএনও মাসুম।

এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হাসান, পিআইও মিজানুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ফেসবুকের দুটি ঘটনাই আমার নজরে আসার পর খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাই। পরে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় কিছু ত্রাণ দুটি পরিবারের মাঝে বিতরণ করি। এ ধরনের মানবিক সাহায্য অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, করোনায় ছোবলে বাংলাদেশ। দেশের সব অফিস আদালতের পাশাপাশি দোকান পাট আগামী চার এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে দেশের শ্রমজীবী মানুষের। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তে পারে এই ছুটি। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে দেশে কয়েক কোটি দিন মুজুর শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের।

আমাদের বাণী ডট কম/৩০মার্চ ২০২০/সিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।