আমাদের বাণী ডেস্ক, ঢাকা;  সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। মৃত্যু সবার দুয়ারে এসে কড়া নাড়ছে। সবার মধ্যে এক চাপা আতংক বিরাজ করছে। সুস্থ সবল শরীর নিয়ে চলাফেরা করা আজ কঠিন হয়ে পড়েছে। সারা বিশে^র সমস্ত মানুষ করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে। উন্নত বিশ^ও আজ করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। রাশিয়া এবং কিউবার মত দু-একটি দেশ করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবুও সার্বিকভাবে তারা করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পেরেছে এটা বলা যায় না। বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করাটা অনেক কঠিন ব্যাপার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ফলে জনগণ কিছুটা সুফল পেতে শুরু করেছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনের সর্ব্বোচ্চ সতর্কতার কারণে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধের ঘোষণার কারণে জনগণের উদ্বেগ উৎকন্ঠা কিছুটা মনে হয় বেড়েছে। তবুও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সহ দেশের সেবামূলক সংস্থা গুলো মাঠে কাজ শুরু করার কারণে উদ্বেগ উৎকন্ঠা কিছুটা কমবে বৈ বাড়বে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক সহ সকলের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করলেও আমার মনে হয় শিক্ষক সমাজের মনে স্বস্তি নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার যে ক্ষতি হচ্ছে তা শিক্ষকদের চিন্তাগ্রস্থ করছে। শিক্ষক সমাজকে প্রতিনিয়ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে ভাবতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। সঠিক সময়ে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাই করা খুব কঠিন ব্যাপার। সকাল বিকাল ক্লাশ নিয়েও পড়াশুনার ক্ষতি পূরণ করা যায়না। শিক্ষকের কাছে জবাবদিহিতা না থাকার করণে প্রতিষ্ঠানের লম্বা ছুটিতে ছাত্র-ছাত্রী পড়ার টেবিলে বসতে চাই না। অনেক অভিভাবক শিক্ষকের কাছে নালিশ করে। তাদের সন্তান প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে পড়ার টেবিলে বসতে চাই না। প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হয়।

বৈশ্বিক  সমস্যার মধ্যে আরও একটি বিষয় শিক্ষকদের কে ভাবাচ্ছে যারা নন.এমপিও শিক্ষক তাদের পরিবার পরিজন কিভাবে চলবে। করোনা আতংকে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস স্টক করা শুরু করেছে। অসৎ ব্যবসায়ী মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছেমত দাম হাকাচ্ছে। মানুষের সামান্য অসচেতনতার কারণে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রশাসনিক নজরদারির কারণে কিছু বাজারে পরিস্থিতি হয়ত স্বাভাবিক আছে। কিছু বিপরীত চিত্র ও আছে। দেশের সকল বাজার ব্যবস্থাকে প্রশাসনের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টটা সবচাইতে বেশি।

নন.এমপিও শিক্ষক সমাজের কষ্ট অবর্ণনীয়। যারা বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকুরী করছে তাদের কষ্টটা শুধু তারাই অনুভব করতে পারবে।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ড গড়ার কারিগর হলো শিক্ষক। শিক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালি হাতিয়ার। আর এই হাতিয়ার সবার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষক সমাজ। কিন্তু বছরের পর বছর শিক্ষার আলো বিলিয়ে দেওয়ার পরেও এক শ্রেণির শিক্ষকের ঘরে আলো জ¦লে না। ঘরের চুলাও তিন বেলা জ¦লে না। স্ত্রী-সন্তান,বৃদ্ধ বাবা,মা সহ তাদের এক কষ্টের সংসার। নন.এমপিও শিক্ষক পরিবার নিয়ে তিন বেলা খেয়ে পরে যারা বেঁচে আছে তাদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বিনা বেতনের শিক্ষকরা কিভাবে বেঁচে থাকবে। দুঃচিন্তাগ্রস্থ জীবন নিয়ে কিভাবে তারা বেঁচে থাকবে। কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে জীবন সংগ্রাম করবে। দুঃচিন্তাগ্রস্থ জীবন নিয়ে শিক্ষা নামক শক্তিশালি হাতিয়ার কিভাবে সবার হাতে তুলে দেবে। কিভাবে তারা জাতির মেরুদন্ড শক্ত করবে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ঘর হল সবচেযে নিরাপদ জায়গা। কিন্তু নিজের ঘরের মধ্যে দুঃচিন্তা ও অভাব নামক যে ভাইরাস অনেক আগেই ঢুকে পরেছে তার মোকাবেলা করবে কিভাবে। পরিবার পরিজনদের নিয়ে করোনার চাইতেও অনেক শক্তিশালি ভাইরাস প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিল নন.এমপিও শিক্ষক সমাজ। কিন্তু করোনা ভাইরাস একটু করুণা করল না আমাদের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখপানে চেয়েছিল নন.এমপিও শিক্ষক সমাজ। কিন্তু প্রকৃতির নির্মতায় নন.এমপিও শিক্ষক সমাজের আশাভঙ্গ হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ আজ অনেক দূর এগিযে গেছে। বুলেটের গতিতে সকল কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু নীতিমালা ও তদন্ত প্রতিবেদন এই দুটি কাজ হয় কচ্ছপ গতিতে। ডিজিটাল দেশে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের নিকট থেকে খসড়া এমপিও নীতিমালার মতামত নেওয়া যেত। অথবা এনালগ সিস্টেমে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিকট থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে খসড়া এমপিও নীতিমালার মতামত নেওয়া যায়। সবকিছুতে ভোগান্তি শুধু মাত্র নন.এমপিও শিক্ষকদের। নন.এমপিও শিক্ষক সমাজ শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখপানে চেয়ে রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র আপনিই পারেন নন.এমপিও শিক্ষকদের মুখে হাঁসি ফোঁটাতে । শুধুমাত্র আপনার মাধ্যমে আত্ম শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নন.এমপিও শিক্ষক সমাজ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে পারে।

মো.সাজ্জাদ হোসেন; লেখক- প্রভাষক,হিসাব বিজ্ঞান, লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমাদের বাণী ডট কম/২৫ মার্চ ২০২০/টিএ

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে আপনিও লিখতে পাড়েন আমাদের বাণী ডট কমে। আমরা শিক্ষকদের সকল কষ্ট দুঃখ দুর্দশা, আনন্দ সকলের সাথে ভাগ করে দিতে চায়। লিখতে চাইলে আজই লেখা ইমেইল করুণ; আমাদের ইমেইল ঠিকানা, [email protected], চাইলে ডাক কিংবা কুরিয়ার করেও লেখা পাঠাতে পারেন। আমাদের ঠিকানা; ১১০ আলিজা টাওয়ার (চতর্থ তলা) গ্রন্থিক অফিস, ফকিরাপুর, ঢাকা ১০০০।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।