বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় ২০১১ সালে অনার্স পাস করি। মাস্টার্সও (২০১২) এখান থেকেই করেছি। অনার্স শেষ করার পরই ১২তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অবেদন করি। প্রথমে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য কোনো কোচিংয়ে ভর্তি না হয়ে নিজে নিজেই বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর পড়াশোনা শুরু করি। আমার বড় ভাই শিক্ষক, তাই দরকারি পরামর্শ-নির্দেশনার জন্য কারো কাছে যেতে হয়নি। অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা না করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায়ই মূল মনোযোগ দিই।

শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারিতে অংশ নিয়ে মোটামুটি ভালো পরীক্ষা দিই। কিন্তু চূড়ান্ত ফল বেরোতেই দেখলাম ‘ফেল’। আশাহত না হয়ে পড়াশোনা আবার শুরু করি। তখন মনে হয়েছে, প্রিলির সিলেবাসটা অনেক বড়, অনেক সময় দিতে হবে। এদিকে হাতখরচের জন্য আপাতত একটা চাকরিরও দরকার। তাই একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি। স্কুলের ব্যস্ততা ও পারিবারিক কারণে ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে খুব আফসোস হলো। মনে মনে ঠিক করি, যেভাবেই হোক ১৪তম নিবন্ধনের প্রিলি, লিখিত, ভাইভা—সব ধাপে এবার পাস করতেই হবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ৮টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নিয়মিত পড়তাম। প্রতিনিয়ত অনলাইনে পত্রিকার খবরাখবর দেখতাম, গুরুত্বপূর্ণ খবর ও তথ্য নোট করে রাখতাম। বাংলার জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও সৌমিত্র শেখরের বই পড়েছি। ইংরেজি ও গণিতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছি। ইংরেজির জন্য ‘ইংলিশ ফর কমপিটিটিভ’ পড়েছি। গণিতের জন্য গণিত সহায়িকা, প্রফেসর’স এবং পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির গণিতের পাঠ্য বই আগাগোড়া রপ্ত করেছি। আর এ কারণে গণিতের বেসিক পুরোটাই দখলে ছিল। চাকরির পরীক্ষাগুলোতে গণিতের বোর্ড বই থেকে বেশির ভাগ অঙ্ক আসে।

অনার্স পড়ার সময় থেকেই টিউশনি করতাম। শিক্ষার্থী পড়াতে গিয়ে গণিতের চর্চাটা ভালোই হতো। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এটা বেশ উপকারে এসেছে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রফেসর’স এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দেখেছি। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত বেশ কয়েকটি গাইড পড়েছি। আমার মনে হয়েছে, একসঙ্গে বেশি গাইড বই ফলো না করে মন দিয়ে একটি পড়লেই যথেষ্ট। প্রিলির প্রস্তুতিতে সিলেবাসের শেষ বলে কিছু নেই। তাই বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে বোর্ড বইগুলোর কোনো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বা বিষয়বস্তু বাদ দিইনি। ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রিলিমিনারি পাস করি। এরপর ‘কৃষিশিক্ষা’ বিষয়ের জন্য ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিই। লিখিততে নিজের মতো করে ঠিকঠাক লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া যায়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর ২০ নম্বরের ভাইভা। ভাইভা বোর্ডে পঠিত বিষয়, কৃষিশিক্ষা ও সমসাময়িক ঘটনাবলির ওপর প্রশ্ন করেছিল। সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিই। নিবন্ধন পরীক্ষায় আমার তালিকাভুক্তি হয়। পরে এনটিআরসিএর গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে মেধাক্রম অনুযায়ী আমি নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হই।

নতুনদের উদ্দেশে বলব, নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিশেষ করে সাধারণ জ্ঞান প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত সময় দিতে হবে। দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দিকে নজর রাখতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই তুলনামূলক কঠিন। এ ধাপ টপকালে লিখিত ও ভাইভা অনেকটাই সহজ মনে হবে। আমার মতে, পরীক্ষার আগের ছয় মাস নিয়মিত সাত-আট ঘণ্টা করে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় পাস করা কঠিন হবে না।

মো. সাইফুল ইসলাম [ ১৪তম বেসরকারি নিবন্ধনে তালিকাভুক্ত শিক্ষক ]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।