মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা;  গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের ভুল বুঝিয়ে জমি ক্রয়। এরপর সেই জমি সরকারি প্রকল্পে বিক্রি করে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখায় কর্মরত অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শহিদুল ইসলাম এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক।

শহিদুল হ’ঠাৎ করেই এত সম্পদের মালিক হওয়ায় শহরজুড়ে বইছে নানা আলোচনা-স’মালোচনার ঝড়। ডিসি অ’ফিসে ১৫ হাজার টাকা বেতনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী শহিদুল শহরের বড় মাঠের পাশে নির্মাণ করছেন ছয়তলা ফাউন্ডেশনের আলিশান বাড়ি। এরই মধ্যে সম্পন্ন হতে চলেছে তিনতলা। বাড়িটিতে রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা। এ ছাড়া শহরের গোয়ালপাড়ায় নিজের আট শতক জমির ওপর বসতভিটা, সদরের শিংপাড়া এলাকায় ৬০ শতক জমি ও আবাদি এক একর জমি রয়েছে বলে জানান শহিদুল।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কা’র্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে যোগ দেন শহিদুল ইসলাম। ২০১১ সালে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সেখানেই অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োজিত আছেন। হ’ঠাৎ করেই এত টা’কার মালিক কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল জানান, ২০১৮ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গোয়াগাঁও গ্রামের চিহারু মোহাম্মদের ছেলে ইমাম উদ্দীনের কাছে ৬৫ শতক জমি কিনেছিলেন ৯ লাখ টাকায়। সেই জমি স’রকারি একটি প্রকল্পে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে ২০১৯ সালে স’রকারের কাছে তিনি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে শহরের জেলা স্কুল বড় মাঠের দক্ষিণ পাশে ৬.১৪ শতক জমি কিনে ওই জমিতে ছয়তলাবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করেছেন সাত মাস হলো। বাড়িটির আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুট। নির্মাণে ব্যয় হবে কোটি টাকার বেশি। সব টাকাই তিনি বৈধভাবে আয় করেছেন বলে দাবি শহিদুলের।

তবে জমির মালিক ইমাম উদ্দীন জানালেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, ‘‘শহিদুল আমাকে বলেছেন, ‘একটি প্রকল্পের কাজে সরকার জমিগুলো কিনবে। আপনারা স’রকারের কাছে জমি বিক্রি করলে টাকা পেতে দে’রি হবে, ঘুরে ঘুরে টাকা তুলবেন, অনেক ঝা’মেলা হবে। এ ছাড়া হ’য়রানিসহ নানা বা’ধা-বি’পত্তির সৃষ্টি হবে।’ এমন ভুলভাল বুঝিয়ে আমারসহ স্থানীয় আরও কয়েকজনের কাছ থেকে শহিদুলসহ কয়েকজন জমিগুলো অল্প দামে কিনে নেন। এর মধ্যে শহিদুলের কাছে আমি ৬৫ শতক জমি বিক্রি করি। তিনি প্রতি শতকে দাম দিয়েছেন আমাকে ৪৫ হাজার টাকা করে। অথচ সেই জমি বিক্রি করে শহিদুল এখন কোটিপতি!’

ঐ এলাকার জমিবিক্রেতা ইমাম উদ্দীন, সিরাজ উদ্দীন, এনামুল হক, কাশিমসহ অন্যরা অ’ভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের জন্য আমাদের জমিগুলো অধিগ্রহণ করবে স’রকার। এমন সিদ্ধান্তের বিষয় আগে থেকেই জানতেন ডি’সি অফিসে কর্মরত শহিদুল। আমাদের ভুল বুঝিয়ে দ্রুততম সময়ে জমিগুলো কিনে নেন তিনি। পরে কয়েকগুণ দামে স’রকারের কাছে জমি বিক্রি করে তিনি এখন কোটিপতি। ৯ লাখ টাকার জমি ক্রয় করে স’রকারের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন তিনি। সে সময় কয়েকজন জমি বিক্রি করেননি শহিদুলদের কাছে। তারা পরে স’রকারের কাছে জমির দাম প্রতি শতকে দুই লাখ টাকার বেশি পেয়েছেন। কিন্তু আমরা জমি বিক্রি করেও দিয়েছিলাম, রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছিলাম। পরে আর কিছুই করার ছিল না। আমাদের সঙ্গে প্র’তারণা করা হয়েছে।’ স্থা’নীয় বাসিন্দারা জানান, স’রকারি অফিসের তথ্য সাধারণ মা’নুষের জানার বাইরে। স’রকার কোন সময় কোন স্থানে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করবে, কখন কোন স্থানের জমি অধিগ্রহণ করবে, সে খবর তাদের দফতরের ক’র্মকর্তা-কর্মচারী ছা’ড়া বাইরের লো’কজনের জানার ক্ষ’মতা নেই। অথচ শহিদুলের মতো কর্মচারীরা ডি’সি অফিসে চাকরি করেন বলেই এমন খবর আগে থেকে জেনে তা কাজে লাগিয়ে নি’রীহ মানুষকে ঠকিয়ে, ভু’ল বু’ঝিয়ে জমি কিনছেন। পরে সেই জমি বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে ন্যায্য মূল্য ও অধিকার থেকে ব’ঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের ভা’বমূর্তি ক্ষু’ণ্ণ হচ্ছে এসব ক’র্মচারীর কারণে।

শহিদুলের কাছে জমি বিক্রি করে এখন আফসোস করছেন উল্লেখ করে ইমাম উদ্দীন জানান, স’রকারি অফিসের লোকদের ফাঁ’দে যেন আর কেউ পা না দেয়। বিষয়টি ত’দন্ত করে তার বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ন্যায্য পাওনা ফেরত দেওয়ার দা’বিও জানান তিনি।

তবে শহিদুল ইসলামের দাবি, তিনি অবৈধভাবে কোনো সম্পদ অর্জন করেননি। নিয়ম মোতাবেক জমি কিনেছেন এবং সরকারের কাছে তা বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা জমির মূল্যের ওপর সরকারের ভ্যাট প্রদান করে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে চেক গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার সাদা টাকা। আপনারা যেমন এসেছেন, এরই মধ্যে ডিএসবি ও এনএসআইর লোকজন খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। তাতে কী হয়েছে! এ ছাড়া আমি ব্যাংক থেকে ঋ’ণ নিয়ে ছয়তলা বাড়ি করছি।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ যাদের কাছ থেকে করা হয়েছিল, তাদের অনেককেই চেক প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া কার সম্পদ কত এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখা সম্ভব হয় না।

আমাদের বাণী ডট কম/২০ মার্চ ২০২০/সিপি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।