নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) বৃহস্পতিবার তথ্য অনুযায়ী দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ হাজার ৪২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৬ জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন।

মোট পাঁচ হাজার ৮৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্তের এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর নতুন ১৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯। নতুন করে ১৩০ জন সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন এক হাজার ৫৩৩ জন। সব মিলিয়ে দেশে মোট পরীক্ষা করা হয়েছে এক লাখ পাচ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা।

কোভিড-১৯’এ মৃত রোগীর তালিকায় পুরুষের সংখ্যা ৭৩ শতাংশ আর নারী মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ।

এদিকে রাজধানী ঢাকার উপর থেকে এই মরণঘাতী ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপে এখনো কাটেনি। করোনা সংক্রমণে লোকাল ট্রান্সমিশন পর্যায় চলছে ঢাকা সিটিতে। জনবহুল ও নমুনা সংগ্রহ সহজলভ্য হওয়ায় শুধু ঢাকায় সিটিতে আক্রান্ত ৫৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ আর সম্পূর্ণ ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৮৪ শতাংশ। মৃত্যুর সংখ্যাতেও এগিয়ে আছে ঢাকা সিটি। ঢাকা সিটিতে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ১০০ জন।

আইইডিসিআর প্রকাশিত মোট আক্রান্ত জেলার সংখ্যা বর্তমানে ৬৩টি। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় করোনা তার ছাপ ফেলেছে। প্রায় সকল বিভাগেই আক্রান্ত বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

আইইডিসিআর’এ সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, শুধু ঢাকা বিভাগেই সর্বমোট আক্রান্ত আট হাজার ৩৫ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা সিটিতে পাচ হাজার ৬৭৪, নারায়ণগঞ্জে এক হাজার ৭২, গাজীপুরে ৩২৮, কিশোরগঞ্জে ২০২, মাদারীপুরে ৫৩, মানিকগঞ্জে ২৮, মুন্সীগঞ্জে ১৭০, নরসিংদীতে ১৬৭, রাজবাড়ীতে ২৩, ফরিদপুরে ২১, টাঙ্গাইলে ৩০, শরীয়তপুরে ৫৪, গোপালগঞ্জে ৪৫, ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ১৬৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামে সর্বমোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৫৫ জন। বিভাগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে চার দশমিক ৭০ শতাংশ। চট্রগ্রাম বিভাগে করোনার হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে কুমিল্লা জেলা। কুমিল্লায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩০ জন। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলায় ১১২, কক্সবাজারে ৪০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৬, লক্ষ্মীপুরে ৪৫, বান্দরবান ৪, খাগড়াছড়িতে ২, নোয়াখালীতে ২২, ফেনীতে ৭, চাদপুরে ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। চট্রগ্রাম বিভাগে মারা গেছে সর্বমোট ১০ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরে ৭৯, নেত্রকোনায় ৬২, শেরপুরে ২৭, ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৮ জনসহ মোট ৩৬৬ জন আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহে মারা গেছে মোট ছয় জন। রংপুরের গাইবান্ধায় ২৪, নীলফামারীতে ৩১, লালমনিরহাটে ৪, কুড়িগ্রামে ২২, দিনাজপুরে ২৯, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০, রংপুর জেলায় ৮২, পঞ্চগড়ে ৮ জনসহ মোট ২২০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন একজন।

এছাড়াও খুলনায় ১৭, ঝিনাইদহে ৩৩, যশোরে ৭৫, চুয়াডাঙ্গায় ১৫, বাগেরহাটে ২, মাগুরা ৮, মেহেরপুর ৪, কুষ্টিয়া ১৮, সাতক্ষীরা ৪ ও নড়াইলে ১৩ জনসহ মোট ১৮৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।

আর বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলায় ৪৪, বরগুনায় ৩৩, পটুয়াখালীতে ২৮, ভোলাতে ৬, ঝালকাঠিতে ১০ জনসহ মোট ১২১ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। তবে পিরোজপুরে আক্রান্ত ১০ জন বর্তমানে করোনা মুক্ত হয়ে সুস্থ আছেন। সিলেটের মৌলভিবাজারে ২৯, সুনামগঞ্জে ৩৬, হবিগঞ্জে ৭০, সিলেট জেলায় ২৭ জনসহ মোট ১৬১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সিলেটে এখন পর্যন্ত পাচজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী জেলায় ২৬, জয়পুরহাটে ৩৪, বগুড়ায় ১৮, নওগায় ১৭, সিরাজগঞ্জে ৪, নাটোর ১১, চাপাইনবাবগঞ্জে ২ ও পাবনায় ১৬ জনসহ মোট ১২৮ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে মোট মৃত্যু চারজন। করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বের সাথে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের জীবন যাত্রার চিত্র। এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে বেড়েছে লকডাউন স্থানের সংখ্যা। দেশে বর্তমানে সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে প্রায় ৩৯৫টি উপজেলা, ৪৯টি জেলা ও ৩টি বিভাগ। সূত্র : আইইডিসিআর

করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে। তবে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস ক্রমে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। পৃথিবীর ১২০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ মারণ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার জন।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। এদিকে ক্রমেই আক্রান্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ৬ষ্ঠ দফা ছুটি বাড়িয়ে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সংক্রমণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেলেও সরকার আজ থেকে মসজিদে নামাজ পড়া উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আগামী ১০ মে থেকে খোলা যাবে দোকান পাট এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে ১৭ মে থেকে চালু হচ্ছে গণপরিবহনও।

আমাদের বাণী ডট/০৭ মে ২০২০/পিবিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।