আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের দাবি মানার জন্য সরকারকে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দাবি না মানলে প্রাথমিক সমাপনী ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস পেলেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে জানিয়েছেন আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকরা।

এদিকে দাবি-দাওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। বৈঠকে শিক্ষক তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী পিইসি পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। শিক্ষকরা প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার কাছ থেকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না শোনা পর্যন্ত কর্মসূচি বর্জন করা হবে না। দাবি না মানলে অনুষ্ঠেয় ১৩ নভেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সহকারী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. ওহিদুর রহমান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩ সালে সর্বপ্রথম জাতীয়করণের সময় সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বেতনের পার্থক্য ছিল মাত্র ১০ টাকা। ৭৭ সালে ঘোষিত স্কেলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন সহকারী শিক্ষকদের চেয়ে এক ধাপ ওপরে ছিল। এরপর ২০০৬ সালে বেতন বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলনে প্রধান শিক্ষকদের দুই ধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটে আবারো। এবার প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে সহকারী শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হলেন।

সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল হক বলেছেন, শিক্ষাকে স্বাভাবিকভাবে চালাতে হলে শিক্ষকদের মধ্যে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষকরা অর্থের জন্য অন্য কোথাও গেলে শিক্ষা চলবে কী করে?

প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ছামছুদ্দিন মাসুদ বলেন- দাবি বাস্তবায়নের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। যৌক্তিক দাবি নিয়েই আন্দোলন করছি। এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বুঝতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম বলেন, বিগত ৬ বছরে শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবগত আছেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হলে কর্মসূচি স্থগিত করার বিষয়টি অবশ্যই ভাবা হবে। প্রতিমন্ত্রী কথা দিয়েছেন, খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাতে আমাদের সাক্ষাৎ হয় সে বিষয়ে তিনি জোর প্রচেষ্টা চালাবেন।

এর আগে এ দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গত ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস, ১৫ অক্টোবর ৩ ঘণ্টা এবং ১৪ অক্টোবর কর্মসূচির প্রথমদিনে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। যদিও কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষকদের চিন্হিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এরপর ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করলে তা পণ্ড করে দেয় পুলিশ। এরপর আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। শিক্ষক নেতারা ঘোষণা করেন, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এর পরও সরকার দাবি মেনে নিতে গড়িমসি করলে পরে ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন শিক্ষকেরা। এতেও সরকারের টনক না নড়লে শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালা ঝুলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।

সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও সহকারি শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের ঘোষণা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।