প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কী বাতিল করা উচিত নয়? কারণ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে সেই পরীক্ষা বাতিল করার কোন বিকল্প নেই। অথচ আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকরা সেটা বুঝতে চান না।

আজ দিনভর যেসব বার্তা পেলাম বিশেষ করে ইনবক্সে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রাইমারির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ফেসবু‌কের নানা গ্রু‌পে পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই সমাধান দেয়া হ‌য়ে‌ছে অনেক জায়গায় টাকা লেনদেন হয়েছে। আমি মনে করি পরীক্ষার আগে যেহেতু এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে পরীক্ষাটা বাতিল হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও পরীক্ষা বাতিল করতে চায় না।

মনে আছে জনতা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় এবং আমি প্রথম আলোতে সেটা তুলে ধরি। তবুও সেই পরীক্ষা বাতিল করতে চায়নি কর্তৃপক্ষ। প‌রে ছাত্র আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল।

আমি মনে করি জনতা ব্যাংকের চেয়ে প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষা মানে জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে সেটি জাতির জন্য ভয়াবহ ব্যাপার। কিন্তু আমা‌দের দে‌শে প্রাইমা‌রি‌কে খুব উপেক্ষা করা হয়। অথচ পৃথিবীর যেসব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা খুব ভালো খোঁজ নিলে দেখা যাবে সেইসব দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানও ভালো। সেখানে মেধাবীরা প্রাথমিকের শিক্ষক হন। নিয়োগ প্রক্রিয়া ভালো। শিক্ষকদের বেতনও ভালো।

আর আমাদের দেশে সরকারি প্রাইমারিগুলোর কী দশা আমরা সবাই জানি। এখা‌নে প্রাইমা‌রির শিক্ষক‌দের বেত‌নের চে‌য়ে সরকা‌রি দপ্ত‌রের পিয়‌নের বেতন বে‌শি। ফ‌লে তারাই প্রাইমা‌রির শিক্ষক হতে আসেন যারা হয়তো কোন ভা‌লো চাকু‌রি পান না। আর প্রাইমারি‌র নি‌য়ো‌গেও চল‌তে থাকে নানা অনিয়ম।

অবশ্য আজ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা যেমন ঘ‌টে‌ছে, আবার আইনশৃঙ্খলা বা‌হিনীর হা‌তে ধরা পড়ার ঘটনাও আছে। পু‌লিশ বল‌ছে, আজ‌কে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায প্রশ্নফাঁস ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে পটুয়াখালী‌তে ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর ম‌ধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুজন উমেদারসহ ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাকি ৩৩ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

পু‌লিশ কর্মকর্তা‌দের কা‌ছে অনু‌রোধ, আপনারা ভা‌লো ক‌রে ঘটনার তদন্ত করুন। কা‌দের যোগসাজসে ফাঁস হচ্ছে আছে তদন্ত করুন। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী‌দের চি‌হিৃত কর‌তেই হ‌বে। আর কর্তৃপক্ষ‌কে বল‌বো, যে কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস হ‌লে সেই পরীক্ষার আর নৈ‌তিক ভি‌ত্তি থাকে না। কাজেই পরীক্ষা বা‌তিল কর‌বেন কী না ভাবুন। আর আগামী দিনগু‌লো‌তে যে পরীক্ষা আ‌ছে সে ব্যাপারে সতর্ক হন। ম‌নে রাখ‌বেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ কর‌তে না পার‌লে জা‌তির ভ‌বিষ্যত অন্ধকার।

লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।