নতুন বছরের শুরুতেই মন্ত্রিসভার রদবদল হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, সরকার ও দলকে আলাদা করার অংশ হিসেবেই এ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার ৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে পদোন্নতি দিয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী করার আভাস পাওয়া গেছে।

এবার মন্ত্রিসভা ও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন হাইকমান্ড। পাশাপাশি দলের প্রতি নিবেদিত এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন যেসব নেতা কোনো পদ পাননি, তাদের মন্ত্রিসভায় বিবেচনা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার রাতে টেলিফোনে বলেন, নতুন বছরে মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ হয়নি। দলীয় কমিটি নিয়েই ব্যস্ত আছি। তবে পুরো বিষয়টির এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তার সঙ্গে আলাপ হলেই বলতে পারব।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, রদবদলে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। এ সংখ্যা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫৮ পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে আসতে পারে একাধিক নতুন মুখ, যারা আগে কখনও মন্ত্রিসভায় ছিলেন না।

পাশাপাশি আগে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন- এমন নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। দফতর পরিবর্তন হতে পারে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো কোনো সদস্যের। এছাড়া কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে, যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দলীয় কোনো পদে রাখা হয়নি।

অন্যদিকে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সদস্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা কোনো অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন, তাদের জন্য রয়েছে ‘অশনিসংকেত’। ইতিমধ্যে এমন কয়েকজনের আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছেছে।

তারা বাদের তালিকায় আছেন বলেও জানান ওই নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক শুক্রবার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দল ও সরকার আলাদা রাখতে।

প্রসঙ্গত, ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ২৫, প্রতিমন্ত্রী ১৯ ও উপমন্ত্রী ৩ জন রয়েছেন। এই মুহূর্তে আটটি মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী নেই। সেগুলো হচ্ছে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আছে জনপ্রশাসন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন মন্ত্রিসভায় যারা নতুন যোগ হবেন অথবা যারা পদোন্নতি পাবেন।

মন্ত্রিসভার যে নয়জন সদস্য দলের বিদায়ী কমিটিতে ছিলেন কিন্তু নতুন কমিটিতে জায়গা হয়নি, তারা হলেন- অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আইনবিষয়ক ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কার্যনির্বাহী সদস্য- শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

এদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে পদোন্নতি দিয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক।

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে এখনও চারজন মন্ত্রী রয়েছেন। তারা হলেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ ব্যাপারে দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ‘সম্মানসূচক’ হিসেবে তার মন্ত্রণালয়টি বহাল থাকছে- এমনটা প্রায় নিশ্চিত। তবে অন্য তিনজনের বিষয়ে দল ও সরকার পৃথকীকরণে প্রধানমন্ত্রী কি সিদ্ধান্ত নেন, সে ব্যাপারে এখনও সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য- রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, সিমিন হোসেন রিমি; র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক রাফিকুল ইসলাম ও আজমত উল্লাহ খান। তাদের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন হাইকমান্ড সংশ্লিষ্টরা।

আরও জানা গেছে, মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন উপদেষ্টা পরিষদের প্রভাবশালী দুই নেতা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে জোট শরিকদের বেশ কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটু।

এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বঞ্চিত নেতাদের সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তের চেষ্টা চলছে। আবার বঞ্চিত কিছু নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ বড় পদ দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রীর মতো দলীয় মর্যাদা পেতে পারেন তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪৫ এমপি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। এখান থেকেও কেউ কেউ স্থান পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়।

১৯ মে প্রথমবারের মতো স্বল্পপরিসরে মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কাউকে সংযুক্ত কিংবা বাদ দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী পদে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার বিভাগ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এরপর ১৩ জুলাই পদোন্নতি দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী হিসেবে ইমরান আহমেদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরাকে নতুন অন্তর্ভুক্তি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে বর্তমান মন্ত্রিসভায় সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।