নানান জল্পনা আর কল্পনার অবসান ঘটেছে। অবশেষে মা হলো সেই পঞ্চম শ্রেণির ধর্ষিতা শিশু ছাত্রীটি (১২)। এনিয়ে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় সামলোচনার ঝড় উঠেছে। নেগেটিভ আলোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই। ক্রমেই ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী। তারা বলেছেন কার অপকর্মের শিকার ওই শিশু কন্যা তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ধর্ষণের শিকার ওই শিশু কন্যাটি ফুটফুটে এক কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছে। যার দ্বারা অপকর্ম হয়েছে তাকেই দায়ভার নিতে হবে নবজাতক ও শিশু মায়ের।

এলাকাবাসী জানায়, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে নবজাতকের জন্ম হয়। নবজাতকের শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নবজাতকের মা সুস্থ আছে। তবে তার সন্তানের বাবা কে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সবাই। তার স্বজনরা পড়েছে বেকায়দায়।

ধর্ষণের শিকার শিশুটি জানায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভোজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) বাবুল চাপরাশী নানান ভাবে ফুঁসলিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। প্রায়ই তাকে ধষণ করতো। একইভাবে গ্রামের চাচা সম্পর্কের জুয়েলও এই সুযোগে তাকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে দফায় দফায় ধর্ষণ করে। কাউকে না জানাতে বলে।

এদিকে রনি নামের আরেক যুবক একই কায়দায় তাকে ধর্ষণ করে। ধারাবাহিক ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে শিশুটি। ১০ ডিসেম্বর থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনতলায় গাইনি-২ বিভাগে ভর্তি রয়েছে সে। হাসপাতালের প্রশাসনসহ তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর রাখছে ‘ভোলা ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ নামের একটি সংগঠন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভোজমহল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান এই স্কুলছাত্রী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার মা বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং বাবা সবজি বিক্রি করেন। ‘ভোলা ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ সংগঠনের পক্ষে সার্বক্ষণিক হাসপাতালে অবস্থান করছেন কলেজছাত্র সুজন।

চার মাসের অন্ত:সত্বা হওয়ার পর শিশুটির মা জানতে পারলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা এবং ধর্ষকদের প্রভাবে মুখ খুলতে না পারায় আজ এ পর্যায়ে পৌঁছে। এখন বড় দুশ্চিন্তা হলো কে নেবে এই নবজাতক ও শিশু মায়ের দায়িত্ব। আর কে এই নবজাতকের বাবা! এনিয়ে চলছে নানান জল্পনা কল্পনা।

ওই শিশুটি আরো জানায়, প্রায় এক বছর আগে প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন বিদ্যালয় ভবনের তিনতলায় লাইব্রেরি কক্ষে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর প্রায়ই সহকারী শিক্ষিকা রেবাকে দিয়ে তাকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক ধর্ষণ করত। রেবা লাইব্রেরির বাইরে পাহারায় থাকত।

এর কিছুদিন পর একই বাড়ির সম্পর্কে চাচা জুয়েলও বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে তাকে ধর্ষণ করত। এছাড়া রনি নামের এক প্রতিবেশীও তাকে ধর্ষণ করে। গর্ভের চার মাসের সময় শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হলে মায়ের চাপের মুখে তার কাছে সবকিছু খুলে বলে। তখন প্রধান শিক্ষকের চাপের মুখে শুধু জুয়েলকে আসামি করে মামলা করেন শিশুটির মা।

এদিকে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম বলেন, ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে শুধু জুয়েলকে আসামি করে মামলা করেন। ওই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সে এ মামলায় কারাগারে। এছাড়া ওই শিশু শুধু জুয়েলকে দায়ী করে ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার চার্জশিটও দেয়া হয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষকের নাম আসা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, জুয়েল শিশুটির নিকটাত্মীয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে প্রধান শিক্ষকের নাম আসতে পারে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল চাপরাশীর মোবাইল ফোন বন্ধ ও আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার স্বজনরা বলছেন, তিনি স্থানীয় রাজনীতির শিকার।

বরিশালের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিশুকে দেখে গেছি। চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছি। ওই স্কুলছাত্রীর চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়েছি। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে ধর্ষণের মামলাটি পুনরায় তদন্ত করা যায় কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা সম্ভব না হলে ধর্ষণের আরেকটি মামলা করে পুনরায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচাল ডা. এসএম বাকির হোসেন বলেন, পঞ্চম শ্রেণির ওই শিশু ছাত্রী ফুটফুটে এক কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছে। তবে জন্ম নেয়া শিশুটির ওজন আড়াই কেজির কম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।