উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা সংবাদদাতা;  নড়াইলে বিদ্যালয় সংস্কারের নামে ২ লাখ টাকা লুটপাটের পায়তারা চলছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়ায় লুটপাটের অপচেষ্টা ভেস্তে যেতে বসেছে।

জানা যায় সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রতন কুমার বিশ্বাস ও প্রধান শিক্ষক আশিষ কুমার বিশ্বাস বাবুল পরস্পর যোগসাজোশে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দের ২ লাখ টাকা লুটপাটের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ২লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত এ অর্থ বিদ্যালয়ের ভবন ও বাথরুম সংস্কারের নামে লুটপাট করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

গত শুক্রবার (১২জুন ২০২০) দুপুরে সরজমিন এ বিদ্যালয় গেলে জলাবদ্ধ স্কুল মাঠ দেখিয়ে স্থানীয়রা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের মাঠে জলজমে যায়। একটু বেশি বৃষ্টি হলে হাটুজল হয়ে যায়। এলাকার সকলের অনুরোধ বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাট করে জলাবদ্ধতা দুর করা হোক। কিন্তু কারো কোন কথা না শুনে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালের কিছু কিছু ভালো জায়গার পলেস্তরা ভেঙ্গে সেই ভালো জায়গা আবার সংস্কার করছেন। আর সেই সাথে বাথরুমের কাজ করছেন। ভালো জায়গা ভেঙ্গে আবার সংস্কার করে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের প্রক্রিয়া করায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসকারি গৃহবধু বৃষ্টি বিশ্বাস ক্ষোভের সাথে জানান, সামান্য বৃষ্টি হলে স্কুলের মাঠে হাটুজল হয়ে যায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে পারে না। সেদিকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কোন খেয়াল নেই। স্কুলের ভালো দেয়াল ভেঙ্গে সেই জায়গা আবার ঠিক করার নামে সংস্কার বাবদ বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। গোয়াইলবাড়ি গ্রামের রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চরম দুর্নীতি অনিয়মের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। এরপর এই কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কোন সভা না ডেকে নিজেদের ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তাদের বিরূদ্ধে রুটিন মেইনটেনেন্স এর টাকা আতসাতের অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র অফিসে প্রদর্শনের জন্য যেসব রেজুলেশন করা প্রয়োজন তাই করেন। কয়েকজন চাটুকার সদস্য তৈরি করে তাদের নিকট হতে শুধু সাক্ষর নেন। তারাও কোন কিছু জানতে পারেনা, স্কুলে কোন সময় কি হচ্ছে ? দুর্নীতিবাজ সভাপতি রতন বিশ্বাস ও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের মাঠের পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না করে বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা লুটপাটে ব্যাস্ত থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

সর্বসাধারনের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে মিটিং করে সুষ্ঠুভাবে সরকারি অর্থ যথাযথ ভাবে ব্যায় করতে বলা হয়েছে।

একই এলাকার সমরদ বিশ্বাস বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে। কোমলমতি শিশুরা স্কুলে আসতে পারে না। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের দূরাবস্থার কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থ নিয়েই সবসময় ব্যাস্ত থাকেন। সে কারনে তারা মাঠ সংস্কার বাদ দিয়ে বিদ্যালয় ভবনের ভালো দেয়াল সংস্কার করছেন। মাঠ সংস্কার করে ঠিকমত লুটপাট করতে পারবেন না,তাই ভালো জায়গা সংস্কারে ব্যাস্ত আছেন। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক আশিষ কুমার বিশ্বাস বাবুল জানান, বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কারের জন্য ২লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। মাঠ সংস্কার জরুরী হলেও অর্থ বরাদ্দ ভবন সংস্কারের জন্য দেয়া হয়েছে। তাই ওই টাকা দিয়ে মাঠ সংস্কার করা যাচ্ছে না। তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেই কাজ করছেন বলে জানান।

বিদ্যালয়ের সভাপতি রতন বিশ্বাস দুর্নীতি অনিয়মে জড়িত থাকার কথা অস্বিকার করে বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রকাশ বিশ্বাস পদাধিকার বলে এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হলেও ঠিকমত মিটিংয়ে আসেন না। অথচ তারা বাইরে সমালোচনা করেন। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে তারা বিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আগামী ১৬ জুন বিকাল ৪ টায় বিদ্যালয়ের সভা ডাকা হয়েছে।

ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করা হবে। সদর থানা শিক্ষা অফিসার আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,প্রধান শিক্ষকের উচিৎ ছিল স্টিমেট করার সময় মাঠ সংস্কারের বিষয়টা উল্লেখ করা। তিনি সেটা না করে ভুল করেছেন। তারপরও তিনি খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

আমাদের বাণী ডট কম/১৪জুন ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।