সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দিকে নয় বরং প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই উপলক্ষ্যে নতুন করে আরও জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সাত কলেজকে ঢাবির সঙ্গে রাখতে সরকারেরও রয়েছে সদিচ্ছা। তাই বাতিলের সিদ্ধান্ত না নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম ও প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আনতে জোর দেওয়া হবে। এমনটাই ভাবছে সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে সাত কলেজ ইস্যু সমাধানে একটি সুপারিশ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সরকারের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেয় বলে জানা গেছে। কমিটির আহবায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের বক্তব্যে এই ইংগিত পাওয়া যায়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা যেটা পারি সেটা হচ্ছে এটাকে নতুন করে সাজাতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

এদিকে সুপারিশ কমিটি প্রথমে দশ কার্যদিবস, এরপর এক মাস সময় চেয়ে নিয়েও কার্যত কোন সুপারিশ দিচ্ছে না। যদিও কমিটির আহবায়ক বলছেন, আমরা সিস্টেমেটিক্যালি এগুচ্ছি। আরও সময় লাগবে।

জানা গেছে, সাত কলেজ ইস্যু সম্পূর্ণ সরকারের উপর নির্ভর করছে। অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিলের কোনো প্রশ্নই আসে না। এমনকি অধিভুক্ত সাত কলেজ পরিচালনার জন্য বাড়তি জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে প্রশাসন। তবে জনবলের সংখ্যা স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের সুপারিশ কমিটি পর্যালোচনা করবে। তারপর সুপারিশ আসলে অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত জনবল নিয়োগে সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত থাকার বিষয়ে উপাচার্য জানান, এটা সম্পর্কে আমি বলতে পারব না। কোন ভবিষৎবাণী সম্পর্কেও আমি বলতে পারব না। সুপারিশ কমিটি কাজ করছে বলে আমি জানি। শুনেছি তারা কাজ করছে। তাদের বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে, তাদের কাজের পরিধি তারা বুঝবে।

ডাকসু ভিপি নুরুলহক নুর সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়ে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত সুপারিশ কমিটি বেশ আন্তরিকতার সঙ্গেই এ বিষয়ে কাজ করছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই বিস্তারিত জানা যাবে। তবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের বিষয়টি ইতিবাচক।

তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গত ১৯ জুলাই শাহাবাগ অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা সংকট লেগেই আছে এসব কলেজের। ফলে লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

এ কারণে তারা কখনও পরীক্ষার রুটিন, কখনও ফলের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও শাহবাগের মোড় অবরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থী চোখও হারিয়েছে। তবুও সুফল পায়নি সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর। তাই বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।