নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার; বিচার করতে যেয়ে আসামি হয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু। তারই ইউনিয়নে ভাসুর পুত্রের লাথিতে চাচী বাবলী রানী দে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার বিচার করেন তিনি। বিচারকে কেন্দ্র করে বিবাদী পক্ষ চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ছোট্ট বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে পান্ত দে (১৮) হাতে হামলার শিকার হন তার প্রবাসী কাকা প্রজয় দেবের স্ত্রী বাবলী রানী দে (৩২)। মারামারির এক পর্যাযে পান্ত তার কাকীর তলপেঠে এলোপাথাড়ি লাথি মারলে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবগত করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বাবলী রানীকে। সেখানে ছয় দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তারপর মৌলভীবাজারের একঠি প্রাইভেট ক্লিনিকে তিন দিন চিকিৎসা শেষে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় সিলেটে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা নেন। এসময় তার তলপেটে একটি অপারেশন করা হয়। পরে তিনি ২০ জানুয়ারি সিলেটের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর অধীনে চিকিৎসা নেন।

চিকিৎসা শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশী বৈঠক বসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ আব্দুর রউফ, সাবেক সদস্য সওয়াব আলী, মো. মইনুদ্দীন, মহিলা সদস্য আছমা বেগমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে বিভিন্নজন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান বিচার বিশ্লেষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার রায় দেন এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড না করার জন্য পান্ত দের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেন।

জরিমানার টাকা না দেয়ার অজুহাতে এলাকার প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে পান্তর মা অর্পিতা দে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুকে প্রধান আসামী ও বাবলীর স্বামী প্রজয় দেবকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে বাবলী রানী দে জানান, আমার ভাসুরের ছেলের মারধরে আমি গুরুতর আহত হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এখনো আমি পুরোপুরি সুস্থ নই। মৌলভীবাজারে চিকিৎসার সময় চেয়ারম্যান প্রতিদিন আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। আমার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান সবার সম্মতিতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় দেন। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। চেয়ারম্যানের বিচারে আমরা শতভাগ সন্তুষ্ট হয়েছি।

এদিকে স্থানীয় একটি মহলের চাপে উল্টো চেয়ারম্যান ও আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আসামী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিরপেক্ষ থেকে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এই বিচারের ক্ষেত্রেও আমি একই কাজ করেছি। কিন্তু তারা আগামী ২০২১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নষ্ট করতে প্রতিপক্ষের প্ররোচণায় এবং জরিমানা মাফ পেতে এই মামলা দায়ের করে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জানান, মামলা রেকর্ডের পর তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি আমি সরেজমিনে তদন্ত করব।

জানতে চাইলে কুলাউড়া থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান জানান, ওই ঘটনার পর দু’পক্ষের উপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বিচারের সময় পান্ত দেকে মাথায় আঘাত করায় সে আহত হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে গ্রাম আদালতে শুনানী ও মামলা নিষ্পত্তিতে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুর নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।