হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। যে মুক্তিযোদ্ধা জীবনে বিয়ে করেননি-তার সাজানো কন্যাও উঠাচ্ছেন সরকারি ভাতা।

সরকারি ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে ভারতে বসবাস করছেন-এমন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে। ভাতা উত্তোলিত হচ্ছে নামে-বেনামে। অপরদিকে, চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভাড়ার বিপুল পরিমাণ টাকারও কোনো হদিস মিলছে না।

এসব তথ্যাদি ইতিমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে কিন্তু নানান জটিলতার কারণে কাল্পনিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন রোধ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।

চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবদুল গফফার বলেন, চুনারুঘাট উপজেলায় মুক্তিবার্তা, ভারতীয় তালিকা, পুলিশ, সেনা ও বিজিবি তালিকাসহ বিভিন্ন তালিকায় ৫৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে।

বর্তমানে জীবিত রয়েছেন ২৯০ জন। সকল মুক্তিযোদ্ধারাই সরকারি ভাতার আওতাভুক্ত কিন্তু উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের জনৈক শামসুল হককে মুক্তিযোদ্ধা দেখিয়ে আফচান নামের এক মহিলাকে ওয়ারিশ বানিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে ভাতা।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকার ২৬৮১২ ক্রমিকে শামসুল হক নামের যে ব্যক্তির নাম রয়েছে তার বাড়ি পাবনা জেলায়। তার ভাতা উত্তোলন হচ্ছে চুনারুঘাট থেকে। পাইকপাড়া ইউনিয়নের কাপাই চা বাগানের মৃত মুক্তিযোদ্ধা রাখেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য’র কন্যা রূপালী ভট্টাচার্য তার বাবার ভাতা উত্তোলন করছেন নিয়মিত।

অথচ রাখেশ ভট্টাচার্য চিরকুমার অবস্থায় মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। সাতছড়ি চা বাগানের মুক্তিযোদ্ধা ধর্মজিত পান তাঁতী ধর্মান্তরিত হয়ে সিলেটের কুলাউরা উপজেলার একটি খাসিয়া পঞ্জিতে বসবাস করছেন।

জনৈক বুধু মুণ্ডা নিজেকে ধর্মজিত পান তাঁতী পরিচয় দিয়ে সরকারি ভাতা উত্তোলন করছেন শুরু থেকেই। কালেঙ্গা বন রেঞ্জের ছনবাড়িতে যুদ্ধাকালীন সময়ে বসবাস করতেন মহান্ত উড়াং নামের এক ব্যক্তি।

স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে যান। মহান্ত উড়াং নামের সেই মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করছেন পারকুল চা বাগানের রট উড়াং নামের এক চা শ্রমিক। রানীগাঁও ইউনিয়নের জনৈক সুবোধ দাশ ভারতে বসবাস করলেও তার পুত্র অরিরুদ্ধ দাশ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেছেন।

অথচ সুবোধ দাশ একজন অমুক্তিযোদ্ধা। সাবেক কমান্ডার আবদুল গফ্‌ফার আরো বলেন, চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মিত হবার পর ওই কমপ্লেক্সের চারটি দোকান প্রতিটি ২১ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয় এবং দোকানির কাছ থেকে জামানত হিসাবে ১২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছিল।

সেই ১২ লাখ টাকা এবং বিগত ২০ মাসের ভাড়া বাবদ আরো ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার কোনো সন্ধান নেই। টাকাগুলো কোথায় আছে কেউ জানেন না। চুনারুঘাট কৃষি ব্যাংক হিসাব নং ৩৪৮২ তে মাত্র ৪৮ হাজার টাকা জমা রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইসহ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সরকারি ভাতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এজন্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ভেঙে সেই কমিটির প্রশাসনিক দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে হস্তান্তর করা হয়। প্রশাসনিক কমিটি করার আগে চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন আবদুস ছামাদ। তার বিরুদ্ধে এখন অভিযোগের পাহাড়।

সাবেক কমান্ডার আবদুল গফ্‌ফার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ নিজেকে এখনো কমান্ডার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মুত্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। তার কাছে টাকার হিসাব চাইলে তিনি হিসাব দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যার কারণে সাধারণ মুত্তিযোদ্ধারা তার দুর্নীতির তদন্ত দাবি করছেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আঃ সামাদ বলেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেন নি। তার ওপর মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মইন উদ্দিন ইকবাল বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।