মানুষ গড়ার কারিগর যদি হয় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, সেখানে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন কিভাবে সম্ভব? একজন শিক্ষক যদি একটু সচ্ছলভাবে চলতে না পারে, তিনি কিভাবে মানসম্মত শিক্ষা দিবেন? জাতি হিসেবে বাংলাদেশ তো পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সকল পর্যায়ে বিশ্বের বুকে সুপরিচিত নাম-বাংলাদেশ। একটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের উন্নত শিক্ষার উপর। আর প্রতিটি মানুষের শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে। অথচ এদেশের প্রাথমিক শিক্ষক আজও অবহেলিত, আজও তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় সে দেশের প্রাথমিক শিক্ষককের উচ্চ বেতন এবং ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ তো ভিআইপি মর্যাদা চায় নি, উচ্চ বেতনও চায় নি। তাহলে কেন তাদের প্রতি এত বৈষম্য?

কচি বাচ্চাদের মন জুগিয়ে পড়ানো কি এত সহজ মনে হয়? একটি শিশুকে পাঁচ বছর বয়স থেকেই প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ অতি যতনে শিক্ষাদান করান। এত অভিযোগ, চেচামেচির মধ্যেও একজন শিক্ষক কখনো মনোক্ষুণ্ণ হয় না, বরং অতি যত্নের সাথে অ আ, ক খ, ১ ২ শিখিয়ে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। একজন প্রাথমিক শিক্ষককে হতে হয় একজন অভিনেতা।

প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক। অথচ প্রধানশিক্ষকগণ বেতন পান ১২তম গ্রেডে। যেখানে একজন ডিপ্লোমাধারী নার্স বেতন পায় ১০ম গ্রেডে সেখানে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষককে অনেক নিচে রাখা হয়েছে। এটা কেমন বৈষম্য? একজন কম্পিউটার অপারেটর বেতন পায় ১০ম গ্রেডে, একজন কৃষি ডিপ্লোমাধারী বেতন পায় ১০ম গ্রেডে অথচ অবহেলিত প্রধানশিক্ষক পান ১২তম গ্রেড। এ লজ্জা কি সেই শিক্ষকের নাকি এ জাতির?

একজন সহকারী শিক্ষককে বেতন দেওয়া হয় ১৫তম গ্রেডে যা তৃতীয় শ্রেণির নিম্ন পর্যায়ে। অনেক কম বুদ্ধিমান শিক্ষিত লোক মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা তো এসএসসি/এইচএসসি পাশ, তাদের বেতন বাড়ানোর দরকার নেই। আপনরা কি এটা জানেন না যে তাদের দেড় বছর মেয়াদী ডিপিএড করতে হয়? তাহলে প্রধানশিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে বাধা কোথায়?

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় প্রধানশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ধরা হয়েছে স্নাতক পাশ। এখন প্রতিটি নিয়োগে অনার্স-মাস্টার্স মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছেন। তাই বেতনবৈষম্যের অবসান জরুরি। তাছাড়া শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতিহারে বেতনবৈষম্যের অবসানের কথা বলেছেন।

প্রতিটি শিক্ষক মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তাদের কষ্ট দূর হবে। বেতন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলনে যেতে হয় এটা প্রতিটি জাতির জন্য লজ্জার। তাই আন্দোলনে যাওয়ার আগেই যেন প্রধানশিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকের ১১তম গ্রেড প্রদানের গেজেট প্রকাশ হয়। জাতিগড়ার কারিগরদের যেন আন্দোলনে নামতে না হয়। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সহকারী শিক্ষক
মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
ধনবাড়ী, টাংগাইল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।