সাইফুর রহমান; ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) গঠিত হওয়ার পর মোটামুটি সঠিক ভাবেই শিক্ষক  নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদানের কাজ করে আসছিল । আর সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টান (স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা) গুলো কমিটির মাধ্যমে  নিয়োগের কাজ সম্পন্ন  করতেন । কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ থাকার কারনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল। তাই ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এক পরিপত্রের মাধ্যমে  নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএর হাতে চলে যায়।

বেকার নিবন্ধন ধারীরা বিনা টাকায় চাকুরি পাওয়ার  স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু সেই স্বপ্নতে বিনামেঘে ব্জ্রপাত নেমে এলো নিবন্ধনধারীদের মাঝে। এর প্রধান কারণ কি?? বা  এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে এত মামলাই বা কেন?? আর এই মামলার জন্য আসলে কে দায়ী?  এনটিআরসিএ নাকি  বেকার নিবন্ধন সনদ ধারী?? এ বিষয়ে একটু  আলোচনা করা যাক।  ২২ শে অক্টোবর ২০১৫ সালে যখন নতুন পরিপত্র জারী করা হয় তখন পর্যন্ত ১– ১২ তম নিবন্ধন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এ পরিপত্রে বলা হয়- প্রতি বছর ১টি নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় মেধার ভিত্তিতে উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে এনটিআরসিএ এবং সনদের মেয়াদ হবে ৩ বছর যা আগে ছিল আজীবন। এতে করে ১ থেকে ১২ তমের অধিকাংশ সনদ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু যা সম্পুর্ণ  আইনের পরিপন্থি। কারন ১ থেকে ১২ তমরা এনটিআরসিএর পরিপত্র ও বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়ম মেনেই পাস করেছিল। উদাহরন সরুপ বলা যায়  ২০০১ সালের আগে এস এস সিতে ডিভিশন ভিত্তিক রেজাল্ট দেওয়া হতো কিন্তু পরবর্তীতে জিপিএ ভিত্তিক রেজাল্ট প্রকাশ করা হচ্ছে।পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার  ক্ষেত্রেও দেখা যায় বিভিন্ন নিয়ম নীতি। তাই বলে কি, আগের সনদ বা নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে??উত্তর হবে না। সমন্বয় করা হয়।সময়ের পরিবর্তনের সাথে নিয়ম নীতি পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক তাই বলে ৪ – ৫ লক্ষ সনদ বাতিল হবে এটা কোন ধরনের নীতিমালা??এতে করে বেকার নিবন্ধনধারী হতাস ও ক্ষুদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালে মহামান্য হাইকোটে  ২৪৩ টি মামলা করে।

১৪ ই ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ৭টি নির্দেশনা দিয়ে ১৬৬ টি মামলার  এক মীমাংশিত রায় প্রদান করে হাইকোট। এই রায়ে বলা হয় জাতীয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিবে কর্তৃপক্ষ এবং নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত  নিবন্ধন সনদের মেয়াদ বহাল থাকবে।এই রায়ের ফলে অনেকে আশার আলো দেখলেও আবার অনেক নিবন্ধন ধারীকে হতাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।  কারণ ১২ ই জুন ২০১৮ সালে আবার আর একটি পরিপত্র অর্থাৎ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা -২০১৮ জারী করে। এতে করে আবেদনের যোগ্যতা হারায়  ছয়মাস মেয়াদী কম্পিউটার ডিপ্লোমা ( যদিও ২০১৬ সালের আর একটি মামলায় সনদের বৈধতা পায়)এবং ৩৫ বছর উর্ধ্ব নিবন্ধন ধারীসহ অনেকে। এমন কি সদ্য পাস করা ১৪ তম প্রভাষক আইসিটি শিক্ষকরাও ২য় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তিতে  সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও যোগদান করতে পারেনি, নীতিমালার কারনে।

আবার অনেকে ভুলপদে সুপারিশ পেয়ে যোগদান করতে পারেনি, আর যারা যোগদান করেছেন তারা বিনা বেতনে চাকুরি করে আসছে। ২০১৯ সালে বেকার নিবন্ধন ধারীদেরকে আবার মামলার দিকে ঠেলে দেয়া হয় ।ফলে তারা আবার হাইকোটের  দারস্থ হয়। বর্তমানে যেসব মামলা চলমান আছে তার মধ্যে  উল্লেখযোগ্য হলো – রায় পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারনে কন্টেম মামলা,ছয়মাস মেয়াদী কম্পিউটার ডিপ্লোমা ধারীদের আইসিটি মামলা, সম্প্রতি রায় পাওয়া ৩৫ বছর উর্ধো মামলা যা বর্তমান আপিল বিভাগে চলমান,১২,১৩ তমদের একক নিয়োগের রায় যা আপিল বিভাগে চলমান। মোট কথা শত শত মামলা এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে।

এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময় সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তের কারনে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া নিজেদের সনদ অবৈধ ঘোষণা করার কারণে বেকার নিবন্ধনধারীরা আজ হাইকোটের বারান্দায় ঘোরপাক খাচ্ছে এবং নিবন্ধনধারীদের জীবনে মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। অথচ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্যমতে ৬০ হাজার থেকে বেশি শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকুরি করে আসছে। দুদকের বিভিন্ন তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। আর সব নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত যদি হাইকোর্টই দেয় তাহলে এনটিআরসিএ র প্রয়োজন কতটুকু?অবাক করার বিষয়
একটি মামলা রায়ও এনটিআরসিএ পক্ষে যায়নি। তাহলে কেন এত ভুল সিদ্ধান্ত? কেন বেকারদেরকে হাইকোটের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে??১-১২ তম এবং ১৩,১৪ তমদের কোন ব্যবস্থা না করেই, বিভিন্ন পরিপত্র জারীর কারনে মামলাসহ নিয়োগের নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারনে এই সব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।তাই আজ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তীব্র শিক্ষক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।সরকারের যে স্বপ্ন “ডিজিটাল বাংলাদেশ”, তা ব্যাহত হচ্ছে।

তাই এসব অচল অবস্থা দুর করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী,  শিক্ষাসচিব ও মাউশির মহাপরিচালক সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক; সহকারী শিক্ষক (গণিত), রাসুলপুর দাখিল মাদ্রাসা, বাহুবল, হবিগঞ্জ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।