ঈদে আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ জুড়ে আছে সালামি বা ঈদি। ঈদকে ঘিরে কয়েক ধরেই চলে এই সালামি দেয়া নেয়ার পালা। ঈদ বা বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছোটরা তাদের বড়দের সালাম বা কদমবুসি করে। এসময় বড়রা ছোটদের কিছু টাকা উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। এটাই সালামি। তবে সালামির এই চল আগের চাইতে এখন অনেক বদলে গেছে বলে মনে করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৈয়বা হায়দার।

“আমাদের সময় সালামি পেতো কেবল ছোট বাচ্চারা। তখন শিশুরা তাদের এই সালামির টাকা দিয়ে কিছু কিনে খেতো বা কিনতো। এখন কেউ এক বছর এমনকি এক দিনের ছোটবড় হলেই সালামি আদায় করে।” অন্যদিকে আয়েশা সিদ্দিকা জানান সালামি আগে আবদারের জায়গায় থাকলেও এখন সেটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“সত্তর আশির দশকে আমরা যখন ছোট ছি লাম তখন মামা চাচারা দুই টাকা সালামি দিতেন। কিন্তু এখন সালামিটা ফর্মালিটির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাইকেই দিতে হয়। এজন্য ঈদে যেমন ড্রেসের-বাজারের যেমন বাজেট রাখতে হয়। তেমনি সালামির বাজেটও আলাদা থাকে। আমরা ছোট থাকতে বড়দের এতো চিন্তা ছিল না।”

সালামি এখন আর শুধু পরিবারের সদস্য বা নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে আটকে নেই। এখন বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও আনন্দের সাথে সালামি আদান প্রদান করে থাকেন।

নাদিয়া হক একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। তার অফিসে ঈদের বন্ধের আগে চলে সালামি আদান প্রদান। এই অভিজ্ঞতা তার কাছে একদমই নতুন।

“আমি প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন অফিসে কাজ করেছি। কিন্তু কোন অফিসেই ঈদের সালামি দেয়া-নেয়া এভাবে দেখিনি। গত কয়েক বছরই দেখছি। জুনিয়র সহকর্মীরা বেশ আবদার করে সালামি চান। আমার সিনিয়ররা আমাদের দেন। কিন্তু আগে অফিসে এমনটা দেখিনি। সালামিটা শুধু বাসাতেই ছিল।”

সালামির বৈশিষ্ট্য হলো টাকার অংক যাই হোক না কেন, সেটা চকচকে নতুন নোট হতে হবে। ঈদকে ঘিরে এই বাড়তি নতুন নোটের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবার সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

সালামি যে শুধু ঈদে দেয়া হয়, তা নয়। আকিকা, জন্মদিন, প্রথম শিশুর মুখ দেখা বা নতুন বর বউকে দেখতে এসেও অনেকে সালামি দিয়ে থাকেন। তাই এর সঙ্গে ধর্মীয় বিধির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়ই কেবলই সামাজিক একটি প্রথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে ঠিক কবে থেকে আমাদের দেশে এটা পালন হচ্ছে সেটা নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইভা সাদিয়া সা’দ জানান, উপমহাদেশে এই অর্থ উপহারের প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

সেটার পথ ধরেই এই সালামি প্রথা এসেছে বলে তার ধারণা। যেন শিশুরা বিশেষ দিনটিতে তার নিজের টাকা খরচের স্বাধীনতা পায়। সা’দ বলেন, “সালামি নামটাই তো এসেছে সালামি থেকে। আর এটা পায়ে হাত দিয়ে সালামকে বোঝায়। আর কদমবুসি হলো উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি। মধ্যপ্রাচ্যে বা মুসলিম আরব দেশ-গুলোয় কিন্তু পায়ে হাত দিয়ে সালামের প্রথা নেই।”

আগের চাইতে সালামির ধরণেও পরিবর্তন এসেছে বলে উল্লেখ করেন সা’দ। দেশের মাথাপিছু আয়, জীবন যাত্রার মান উন্নত হওয়ায় সালামির পরিমাণে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে বলে তিনি মনে করেন। ঈদের আনন্দ সবচেয়ে রেখাপাত করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে। আর সালামি এতে যোগ করে নতুন মাত্রা।

সালামির অংক যাই হোক। সেটা হাতে পাওয়া তারপর কে কত পেল সেটার হিসাব করা আর সেই অর্থ দিয়ে কিছু খাওয়া বা কেনাকাটার মধ্যেই যেন থাকে ঈদের আনন্দ। সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।