জিকলুল হক, উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা;  স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানতে অনীহা এবং মাস্ক ব্যবহার না করায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় করোনা রোগের প্রার্দুভাব দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও।

আজ শনিবার (১৮ জুলাই ২০২০)  পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৯জন এবং এই রোগে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ৮০জন। এ্কই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩ হাজার ৯৯জন।

এই ভাইরাসে এত মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেলেও গোড়ামির কারণে তারপরেও মানুষের মধ্যে বাড়ছে না সচেতনতা । প্রশাসন মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার আহ্বান জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলে জানিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রংপুর জেলাতেই। এই জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪১৬জন। এ সময়ে এই জেলাতে মারা গেছে ২৬জন এবং একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯৯২জন। অপরদিকে, দিনাজপুর জেলায় মোট আক্রান্ত ১ হাজার ১৪৬জন। মারা গেছে ২২জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮২জন।

নীলফামারী জেলায় মোট আক্রান্ত ৫৮১জন। মারা গেছে ৯জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩২জন। গাইবান্ধা জেলায় মোট আক্রান্ত ৫১২জন। মারা গেছে ১০জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯২জন। কুড়িগ্রাম জেলায় মোট আক্রান্ত ৩১৮জন। মারা গেছে ৫জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৫জন। ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট আক্রান্ত ২৭৩জন। মারা গেছে ২জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১২জন। লালমনিরহাট জেলায় মোট আক্রান্ত ২৩৯জন। মারা গেছে ২জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭০জন এবং পঞ্চগড় জেলায় মোট আক্রান্ত ১৯৪জন। মারা গেছে ৪জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪৪জন।

স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, একই সময়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় শনাক্ত বিচেনায় সুস্থতার হার ৬৬ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এ ব্যাপারে রংপুরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অধ্যক্ষ খন্দকার আবুল হাসনাত ফখরুল আনাম বেন্জু এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানালেন, রংপুর শহরে মূলত গ্রামের লোকজন কেনা কাটার জন্য আসলেও করোনাভাইরাস যে একটি মরণব্যাধি ভাইরাস এবং যার কোনো চিকিৎসা এখনও বের হয়নি তা তারা জানেন না বা সে সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতাবোধ সেভাবে তৈরি হয়নি। নিজেদের রক্ষা করতে যে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হয় তা তারা মানতে চান না। এছাড়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধর্মীয় গোড়ামিও একটি কারণ উল্লেখ করে বেনজু জানালেন, গ্রামের মানুষজন সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বাঁচালে সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র বাঁচাবেন। কিন্তু তাদের যে স্বাস্থ্য সচেতন এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে তা তারা করতেই চান না। তিনি শহরে করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হলেও গ্রামে সেভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে না বলে প্রশাসনকে গ্রামে বেশি করে প্রচার প্রচারণা চালানোর অনুরোধ জানালেন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, রংপুর জেলার মধ্যে সিটি করপোরেশন অর্থাৎ মেট্রোপলিটন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, এখানে মানুষের বসবাস অনেক বেশি এবং ঘনত্বের অনুপাতে এখানে যত লোকের বসবাস সে কারণে এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তবে সিটি করপোরেশনের বাইরে জেলার অন্যান্য উপজেলায় আক্রান্তের হার অনেক কম বলে জেলা প্রশাসক জানালেন। এরপরও করোনাভাইরাস যে একটি মরণব্যাধি ভাইরাস সে সম্পর্কে রংপুরের মানুষকে সচেতন করতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের সমন্বয়ে সচেতন করার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রচার প্রচারণাও ব্যাপকভাবে চালানো হচ্ছে। এছাড়া যারা নিজেরা সচেতন হচ্ছেন না তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করাও হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান খোলা কাগজকে জানিয়েছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনের সর্বশেষ (১৮  জুলাই ২০২০)  তহ্য অনুযায়ী,  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৮১ জনে।  একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ২  হাজার ৭০৯ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬৬  জন।গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১০ হাজার ৬৩২টি। আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৯২৩টি। মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৪টি। ২৪ ঘণ্টায় এই সংগৃহীত নমুনা থেকে শনাক্ত রোগী পেয়েছি ২ হাজার ৭০৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।’ ‘২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৩৭৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৮ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩৪ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু দাঁড়ালো ২ হাজার ৫৮১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মৃত্যু বিশ্লেষণে পুরুষ ৩১ জন এবং নারী ৮ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন পুরুষ ২ হাজার ৪০ জন এবং নারী ৫৪১ জন।’

আমাদের বাণী ডট কম/১৮  জুলাই ২০২০/পিপিএম

সৈয়দপুরের বিজ্ঞাপন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।