নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; শ্রমিক আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান নিয়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেছেন, যে শ্রমিকের শ্রম ঘামে দেশের প্রবৃদ্ধি তাদেরকে ন্যায্য মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে উন্নয়নের কৃতিত্ব ফলাও করে প্রচার করা শ্রমিকদের সাথে নিষ্ঠুর তামাশা। এই তামাশা বন্ধ করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল শুক্রবার (০৬ মার্চ ২০২০) বিকেল ৪টায় রাজধানী সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট  আয়োজিত প্রায় দশ হাজার শ্রমিকের উপস্থিতিতে গণমিছিল শেষে গুলিস্তানের মহানগর নাট্য মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন এর সভাপতিত্বে শ্রমিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, নেপালের অল নেপাল ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স এর সহ সভাপতি সোনা লাল শাহ, ভারতের এ আই সি সি টি ইউ এর অন্যতম জাতীয় সম্পাদক বাসুদেব বসু, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম ও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ফয়জুল হাকিম লালা। সমাবেশ পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট
শ্রমিক ফ্রন্টের সমাবেশের একাংশ

প্রায় ১৯ টি সেক্টরের শ্রমিকদের উপস্থিতিতে একটি সুসজ্জিত লাল পতাকা মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাস শোষক শ্রেণীর লুটপাট আর শাসকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ইতিহাস। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের তাড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে এখানে শোষণ লুণ্ঠন থাকবে না। কিন্তু বুর্জোয়া শাসনে এই দেশে কয়েক লক্ষ কোটিপতির জন্ম হয়েছে আর কোটি কোটি শ্রমিক, যাদের শ্রমে ঘামে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাঁরা অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের ধনীদের ধন সম্পদ বৃদ্ধির হার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ আর শ্রমিকের মজুরি পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন। তাদের জন্য গণতান্ত্রিক শ্রম আইন নাই, বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রিতা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত, তাঁরা আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে মরে কিন্তু ক্ষতিপূরণের নামে যা পায় তাতে তাদের মৃত্যুকে উপহাস করা হয়। তিনি আরও বলেন, শ্রমিক শোষণ যত তীব্র হচ্ছে মালিকদের সম্পদ বৃদ্ধিও তত দ্রুত হচ্ছে। শুধু মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করে শ্রমিকের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এই অবস্থা পাল্টাতে হলে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে রুপান্তরিত করতে হবে। শ্রমিকদের বিভক্তি শোষকদের শক্তি বাড়ায়, তাই ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই। তিনি সারা দেশের সকল সেক্টরের শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধির আহ্বান জানান। সাথে সাথে সারা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে সংগ্রামের ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুনিয়ার মজদুর এক হও এই শ্লোগান এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে প্রাসঙ্গিক।

কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, কৃষি ও শিল্প শ্রমিকের ঐক্য খুবই জরুরি। গ্রামের বেকার যুবক যুবতীরাই কারখানার স্বল্প মজুরির শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। ই পি জেড ও স্পেশাল ইকনমিক জোনের নামে অধিকারহীন শ্রমিকদের শোষণের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

নেপালের শ্রমিক নেতা সোনা লাল শাহ তাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি তখন বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। শ্রমিকের ঐক্য ভাংতে ষড়যন্ত্রকারীরা সব সময় সক্রিয় থাকে। তিনি বলেন, দেশের সীমানা আলাদা হলেও শ্রমিকের স্বার্থ সবসময় এক। তাই দেশে দেশে শ্রমিকদের সংগগ্রামের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ভারতের শ্রমিক নেতা বাসুদেব বসু বলেন, শ্রমিকদের এক দিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র অন্যদিকে শোষণের নির্মমতা দুটোই মোকাবিলা করতে হবে। শাসক গোষ্ঠী কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভূখ- ভাগ করেছে কিন্তু ভারত বাংলাদেশ দুদেশেই শ্রমিক একই কায়দায় শোষিত হচ্ছে।

সমাবেশে জার্মানির এম এল পি ডি, শ্রীলংকার ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ইন শ্রীলঙ্কা, ভারতের মহারাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন ও মালয়েশিয়ার শ্রমিক সংগঠনের সংহতি ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করে শোনানো হয়। সমাবেশে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। কম্যুনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

আমাদের বাণী ডট কম/০৬ মার্চ ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।