অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছন, রাষ্ট্র চায় রোবট সোফিয়ার মতো শিক্ষার্থী। তাদেরকে যেভাবে বলা হবে ঠিক সেভাবে চলবে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য সরকার পুতুল তৈরির একটা প্রকল্প নিয়েছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন করে অনুগত করা হয়। আর এখান থেকেই মাস্তান ও মেরুদণ্ডহীন তৈরি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত দু‘দিনব্যাপী ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই: উচ্চশিক্ষা, নীতিমালা ও কাঠামো’ শীর্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনের প্রথমদিন তিনি এসব কথা বলেন।

বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যদি চিন্তা করার সক্ষমতা, প্রশ্ন করার আগ্রহ, সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ে মনযোগ বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেটা স্বৈরতন্ত্র, নিপীড়ক, রাষ্ট্র এবং সমাজের প্রভুদের জন্য হুমকি। সে জন্য সরব হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকরা, কিন্তু সেখানেই আবার প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। আমরা তা নিধন করতে চাই।”

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আরও বলেন, “কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই এর উত্তর এককথায় বললে হবে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় চলছে সে রকম বিশ্ববিদ্যালয় আমরা চাই না। বাংলাদেশে বহু রকমের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩এর অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়। এটা শুধু অধ্যাদেশ নয়, এটা একটা ইতিহাস।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা যেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই এর জন্য দুটি জিনিস দরকার। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা এবং ছাত্র সংসদ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হয়। কিন্তু তা উচ্চমানের হয় না। মাতৃভাষার মাধ্যমে যে উচ্চ শিক্ষা এ চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করিনা। প্রয়োজন ছিল মৌলিক বইয়ের, গবেষণার এবং অনুবাদের। কিন্তু তা আমরা তা করতে পারিনি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারমান দুর্বল হয়ে পড়েছে।”

“আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজন হলো শিক্ষার্থীরা কিভাবে সাংস্কৃতিক শিক্ষা নিচ্ছে, সামাজিক হয়ে ওঠছে। আর এই বিষয়গুলো ছাত্র সংসদের মধ্যদিয়েই তৈরি হয়। আমরা জানি যে গত ২৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ছাত্র সংসদ ছিলনা, এখনও যেটা হয়েছে তা আমরা সাবই জানি। তাই এই দুটি জিনিসে যদি সৃষ্টিশীলতা না থাকে তবে এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও রাষ্ট্র’ বিষয়ে আলোচনায় স্বাগত ভাষণ দেন অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। এসময় আরও আলোচনা করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

পরে বেলা ১২টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন: কৌশলপত্র’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বখতিয়ার আহমদ।

এ অধিবেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পারভীন জলীর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগনর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আইনুন নাহার ও রায়হান রাইন।

এছাড়াও ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ ব্যানারের এ সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আমাদের বাণী-আ.আ.হ/মৃধা

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।