মোঃ রাজু গাজী, লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা;  জেলার লামা উপজেলায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক শ্রেণীর সংঘবদ্ধ দালাল চক্র এ বানিজ্য চালাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ ।

এই পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্র। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়নবোর্ড, রাঙ্গামাটি জেলার অধীনে সম্প্রসারিত বিদ্যুতের ঠিকাদারের সহযোগী হিসাবে এবং লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে এই চক্র বিদ্যুতের খুঁটি, লাইন স্থাপন এবং মিটার সংযোগ নিশ্চিত করার অজুহাতে আগ্রহী গ্রাহকদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া কিছুতেই মিলছেনা বিদ্যুত সংযোগ।

এইদিকে লামা বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় খুঁটি’স্হাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী এ সব গ্রাহকদের অভিযোগ খুটি, লাইন ও মিটার সংযোগের জন্য গ্রাহক প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজর টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। কোন কারনে কোন গ্রাহক টাকা দিতে ব্যর্থ বা অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কে দেওয়া হচ্ছে না নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ। লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের যোগসাজসে লামা পৌর সভার ১নং ওয়ার্ড কমিশার ফরিদ উদ্দিন এর নেতৃত্বে ও স্থানীয় মাষ্টাররোলে কর্মরত ইলেকটেশিয়ান দের যোগসাজসে এসব নিরব চাঁদাবাজী পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী।

উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বাসিন্দা মুসলিম পাড়ার সুলতান মিয়ার ছেলে ছগির মিয়া জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে তাদের গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারনের কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলাকালীন সময় তারা কোন জায়গায় খুটি স্থাপন করে এবং কিছু খুটি ফেলে রেখে চলে যায়।এই বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ও তাদের অভিযোগ যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে যাতে না পৌঁছায় সেইজন্য আছে অভিনব কৌশল।তাই বেশীরভাগ গ্রামবাসী যোগাযোগ করে ফরিদ কমিশনার এর সাথে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশেষ ব্যাক্তিদের টার্গেট করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দরদরী বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা সাধন বড়ুয়ার কাছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে ১ লক্ষ টাকা দাবী করা হলে পরে ৬০ হাজার টাকায় রফাদফা করতে বাধ্যহন তিনি। উত্তর দরদরী নয়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, আমাদের উত্তর দরদরী নয়াপাড়ায় বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের বাড়ি প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। আমি নিজেও ৯ হাজার টাকা দিয়েছি।এছাড়াও হাতিয়া পাড়ার বাসিন্দা আজাদ মিয়া জানান, আমাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ অফিসের ঠিকাদারের একটি দালাল চক্র ১৫ হাজার টাকা দাবী করে ৫ হাজার টাকা দিই, বাকী টাকা না দেওয়ায় তারা তিনটি গর্ত খুড়ে খুটি স্থাপন না করে চলে যায়। এই বিদ্যুতের খুটির গর্তে পড়ে আমার স্ত্রী গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনায় তিনি পার্বত্য মন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ ও দায়ের করেছেন বলে জানান।

উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে লামা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে গ্রাহক প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে।

এদিকে টাকা না দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে না বলে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করেনি।

এই বিষয়ে বান্দরবান বিদুৎ অফিসের প্রকল্প পরিচালক মুঠোফোনে বলেন,যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে এখানে অনিয়মের বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।তার কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন,ফরিদ মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ এসকল কাজ করে আসছেন তাই তিনি লামা উপজেলায় খুঁটি’র কাজ দেখাশোনা করছেন।

একজন ওয়ার্ড কমিশনারর হয়ে ফরিদ মিয়া কিভাবে বিদুৎ এর কাজ করছে এবং জনগন থেকে টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে এসকল বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অপর দিকে লামা বিদুৎ অফিস ফরিদের পরিবারের ৪ জন সদস্য মাষ্টাররোল ও একজন মিটার পাঠক হিসেবে কিভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

এ ব্যপারে লামা বিদুৎ অফিস সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাই নেয়া হয়েছে।নুন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তবুও কিভাবে বিদ্যুৎ অফিসে জব করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পুর্বে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এসকল লোকজন নিয়োগসহ বিভিন্ন ভাবে কাজের জন্য এদের কে ব্যবহার করেছে।

আমাদের বাণী ডট/০৫ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।