নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া রেল কলোনির কোয়াটারগুলো পুরোপুরি অবৈধ দখলে চলে গেছে। দখলদাররা কোয়াটার ভেঙ্গে গড়ে তুলছে দ্বিতল ভবন। অবৈধ বসবাসকারীরা কোয়াটারের আদি চিত্র বদলে ফেলেছে। নতুন কেউ কলোনীতে গেলে বুঝতেই পারবে না এটি রেলওয়ের কলোনী। কোয়াটারের দরজা জানালা, প্রধান ফটক সবকিছুই বদলে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি দখলবাজ সিন্ডিকেট সৈয়দপুর রেলওয়ে পূর্তবিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) তৌহিদুল ইসলামের মদদে রেল কোয়াটারগুলো দখলে নেয়। পরে তা চার থেকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে সাধারণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই কলোনীতে তিন শতাধিক রেলওয়ের কোয়াটার রয়েছে। হাত বদলে ওইসব কোয়াটার থেকে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অবৈধ টাকা রেলওয়ের ওই কর্মকর্তাসহ দখলবাজরা আপোষে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। মুন্সিপাড়া রেল কলোনী এলাকায় তিনটি দখলবাজ গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ক্লাবের নামে দখলবাজি চলছে। ক্লাবগুলো দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও রাতের বেলা সচল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাত ১০টার পর জমজমাট আড্ডা শুরু হয় ক্লাবগুলোতে। বাইরের উপজেলা থেকেও সমাজের প্রভাবশালীরা ফুর্তি করতে ওইসব ক্লাবে ভীড় জমায়। যা ভোর রাত পর্যন্ত চলে। ক্লাবের অনুষঙ্গ বাংলা মদ থেকে শুরু করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা পর্যন্ত রয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও ওইসব ক্লাব নেতাদের হাতের মুঠোয় থাকায় পুলিশি যেকোন ধরনের অভিযানের বাইরে থাকে মুন্সিপাড়া রেল কলোনীর ক্লাবগুলো। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার যৌবনকালে মুন্সিপাড়া রেল কলোনীতে রেলওয়ের শ্রমিকরাই বসবাস করতো। কারখানায় লোকসংখ্যা কমে যাওয়ায় কলোনীটি রেলশ্রমিক শূন্য হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগায় দখলবাজ চক্র। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত ব্যক্তিরাই রেল কোয়াটারগুলো দখলবাজদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নিয়ে বসবাস করছে। ফলে কলোনীর সভ্য শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। বিপথে যাওয়া উঠতি ত্রাস টাইপের যুবকরাই ওই কলোনীটির নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে মদদ মিলছে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের। এজন্য খুব অনায়াসেই চলে কলোনী এলাকায় অসামাজিক কর্মকান্ড।

টাকার বিনিময়ে রেলকোয়াটার দখল ও আকার-আকৃতি পরিবর্তনের অভিযোগ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বিনিময়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পাকশী ভূ-সম্পত্তি বিভাগের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূরুজ্জামান জানান, সৈয়দপুরে রেলওয়ের বাসাবাড়ি দেখার দায়িত্ব স্থানীয় আইওডাব্লু বিভাগের। বাসাবাড়ি দখল বা রেল কোয়ার্টারের জমিতে বাড়িঘর নির্মাণের দায় আইওডাব্লু বিভাগ এড়াতে পারে না। তবে রেলওয়ের বাসা বাড়ি বা জমিতে বসবাসকারী অবৈধ বহিরাগতদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের অভিযান চালানো হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।