সৈয়দপুর পৌর এলাকায় উন্নয়নের নামে যথেচ্ছাভাবে রাস্তা খোড়াখুড়ির মচ্ছবে জনভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। সারা বছর জনবহুল বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণের নামে সড়ক খোড়া হচ্ছে এবং খানাখন্দক করে রাখা হচ্ছে সড়ক। ফলে ব্যস্ততম রাস্তার ওপর যত্রতত্র রাখা হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী ও ধুলাবালি সয়লাব রাস্তায় চলতে হচ্ছে পথচারীদের। আর প্রকল্পের কাজে ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলে কাজে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে।

গত পাঁচ অর্থ বছরে পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে ১২টি প্যাকেজে সাড়ে ২৪ কিলোমিটার রাস্তা ও ড্রেনের কাজ করা হয়েছে। রাস্তায় বাতি লাগানো হয়েছে পৌনে চার কিলোমিটার এলাকায়। সমউন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে পৌর এলাকার ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ড। আবার এমনও ওয়ার্ড রয়েছে যেখানে রাস্তা ও ড্রেনের বেহাল দশা বিরাজ করছে। সেখানে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ বা সংস্কারে সংস্কারে কোন কাজই করা হচ্ছে না। মূলত ওয়ার্ডবাসীকে ভোটের সমীকরণে সুষম উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে বিশিষ্টজনদের মন্তব্যে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে ১০নং ওয়ার্ডে। উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত টাকার শতকরা ৪০ ভাগ টাকা ব্যয় করা হয়েছে মেয়র আমজাদ হোসেন সরকারের নিজ ওয়ার্ডে।

বিশ্বব্যাংকের এমজিএসপি প্রকল্পের প্রচারিত তথ্য মতে, গেল অর্থবছর পর্যন্ত পৌর এলাকার উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ৭৪ কোটি ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ২৭৩ টাকা। এসব টাকায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ছোট কালভার্ট, ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ সম্পন্নও হয়েছে। এসব কাজে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ আছে। অভিযোগ রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে কংক্রিটের ঢালাই কাজের মাপজোকে ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ফলে খুব সুকৌশলে বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ কয়েক কোটি টাকা পকেটস্থ করার সুযোগ পেয়েছেন।

এদিকে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের সময় নির্মাণাধীন কাজের ময়লা মাটি রাস্তায় স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। নির্মাণ এলাকায় বিকল্প পথে চলুন স্টান্ডবোর্ড দিয়ে রাস্তায় রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। অথচ ওই সাইনবোর্ডের পাশে বিকল্প পথতো দূরের কথা পথচারীদের চলার জন্য ফুটপাতও নেই। এর ফলে রাস্তায় যান চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। রাস্তার পাশে রাখা নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি বাতাসে মিশে নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভিতরে প্রবেশ করায় পৌর এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টের শিকার হচ্ছেন। ধুলাবালি উড়ার কারণে পরিবেশ দূষণসহ দিনরাত রাস্তাগুলো ধুলাচ্ছন্ন থাকছে। বিশেষ করে যানবাহনের চলাচলের কারণে ধুলাবালি দোকানপাট ও আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ও আবাসনের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শহরের ছাত্র ছাত্রীরা শহীদ তুলশীরাম সড়ক (দিনাজপুর রোড) দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে বিরক্তিকর ধুলাবালি মাড়তে হচ্ছে। এমন অভিযোগ করেছেন সৈয়দপুর সরকারি কলেজের শিক্ষাথী নাজমা, পপি, আরিফুল, সবুজ, আরমান ও বিপ্লব। এসব শিক্ষার্থীরা ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, নির্মাণ সামগ্রী মাসের পর মাস রাস্তায় ফেলে রাখায় যান চলাচলের সময় তা বাতাসে মিশে গিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে ঢুকছে। এর ফলে কলেজে যাতায়াত করতে গিয়ে ধুলাবালি মেখে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। কলেজ থেকে আসার পর ওয়াশরুমে গেলে নাক মুখ থেকে শুধু ধুলির কণা বের হয়। এমন দূরাবস্থার তারা অবসান কামনা করেছেন। তবে উন্নয়নের নামে জনদুর্ভোগ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলে কাজের অনিয়ম তদন্তে শহরের বিশিষ্টজনরা দাতা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।

প্রকল্পের কাজে ইঞ্জিনিয়ারিং অনিয়ম ও জনভোগান্তি বিষয়ে মুঠোফোনে সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী  অভিযোগের প্রশ্নে বলেন কোথায় কোথায় অনিয়ম হচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট করে বললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।