নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে টেন্ডার ছাড়াই ফল মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ মিলেছে। কাজের এ টেন্ডার করা হয়েছে মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরুর দীর্ঘ ৭ মাস পর। আর মার্কেটটি নির্মাণ করা হচ্ছে সৈয়দপুর রেল কারখানাসহ শহরের পানি নিষ্কাশনের রেলওয়ের প্রধান ড্রেনসহ দুই পাশের জমির ওপর। ফলে ড্রেনের ওপর মার্কেট নির্মাণের নামে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব এ ড্রেনের জায়গার ওপর মার্কেট নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি।

অভিযোগে জানা যায়, শহরের ১১নং পৌর ওয়ার্ডের সবজি আড়তের পাশে মাড়োয়ারী পট্টি এলাকায় রেলওয়ের প্রধান ড্রেন রয়েছে। এ ড্রেন এবং ড্রেনের দুই পাশের রেলওয়ে জমির ওপর ফল মার্কেট নির্মাণ করতে এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে ফল মার্কেট নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮১ টাকা। অথচ ফল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় টেন্ডার নোটিশ পত্রিকার প্রকাশের আগেই। অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ড্রেনের ওপর ফল মার্কেট নির্মাণ বন্ধ করতে শহরের মাড়োয়ারী পট্টি এলাকার রবিউল ইসলাম রবি নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেন। বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে পৌর কর্তৃপক্ষের মার্কেট নির্মাণ কাজ। এ অবস্থায় গত মার্চ মাসে ড্রেনের ওপর অবৈধ মার্কেট নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।

সূত্র মতে, রেলয়ের ওই ড্রেনটি শহরের মাস্টার ড্রেন। এই ড্রেন দিয়ে রেলওয়ে কারখানার পানিসহ শহরবাসীর গৃহস্থালি ও বৃষ্টির পানি বের হয়ে ভাগাড়ে গিয়ে পড়ে। কোনভাবে ড্রেনটির পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হলে শহরের রাস্তাগুলোতে পঁচা, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির জট সৃষ্টি হবে। বর্ষা মওসুমে ঝুম বৃষ্টি হলে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে হাটু পানি জমে যাবে। এতে করে চরম বিড়ম্বনার শিকার হবেন পথচারীসহ আবাসিক এলাকার অধিবাসীরা। শুধু বিড়ম্বনাই নয় একই সঙ্গে পিচঢালা রাস্তাগুলোরও বেহালদশা হবে। এমনিতেই সড়কের ওপর বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে অনেক রাস্তা নির্মাণের দুই তিন বছরের মধ্যে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ফলে আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই রাস্তাগুলো চলাচল অনুপযোগী হতে চলেছে।

কথা হয় রিক্সাচালক সালাম, অটোচালক বদরুল, পথচারী শাহাজাহান আলীর সঙ্গে। তারা জানান, বছর বছর রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই রাস্তার খোয়া ও পাথরগুলো দাঁত মেলে থাকছে। এতে করে সরকারি টাকা তথা জনগণের করের টাকার অপচয় হচ্ছে। এমন অনিয়ম তারা দ্রুত বন্ধ করতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।
রেলওয়ের মাস্টার ড্রেনের ওপর ঢালাই করে ফল মার্কেট নির্মাণ বিষয়ে কথা হয় ওয়ার্কার্স পার্টির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আলম মাস্টারের সঙ্গে। তিনি বলেন ড্রেনটি রেলওয়ের। এ ড্রেনটি দিয়ে দেশের বৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পানি বের হয়ে যায়। কোনভাবে এটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে রেলওয়ে কারখানা হুমকির মুখে পড়বে। তার মতে, দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয় পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে মোটেই আশা করে না জনগণ।

অভিযোগ সম্পর্কে সৈয়দপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র জিয়াউল হক জিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে ফল মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে ওঠা অভিযোগ যথাযথ নয়।

জানতে চাইলে, পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান জানান, তার জানা মতে পৌরসভার ফল মার্কেট নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। (ছবি আছে)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।