আমাদের বাণী ডেস্ক, ঢাকা;  করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়ে। তবে এই প্রতিষেধক কবে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এদিকে এ ভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থায় হার্ড ইমিউনিটির পথে হাঁটার কথা ভাবছে অনেক দেশই। জনগোষ্ঠীর বড় অংশ আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির এ পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

হার্ড ইমিউনিটির ব্যাখ্যায় ব্রিটেনের গবেষকরা বলছেন, একটি জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মানুষ যদি নির্দিষ্ট কোনো রোগ বা সংক্রামকের প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, তাহলে তাদের মাধ্যমে বাকি ৪০ শতাংশ সংবেদনশীল মানুষের মাঝে আর ওই রোগ ছড়াতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলছে, এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে হবে কমপক্ষে ৭০ শতাংশের মাঝে। ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো এই হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ব থেকে গুটি বসন্ত সম্পূর্ণভাবে নির্মুল হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দুটি পদ্ধতিতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব। একটি টিকা বা ভ্যাকসিনের আওতায় এনে। আর অন্যটি হলো- অধিকাংশ মানুষ ওই রোগে আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে। বিশ্বে বিভিন্ন স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে ইতোমধ্যেই গবেষণা শুরু করেছেন। তবে যেহেতু শিগগিরই টিকা বের হচ্ছে না, তাই বাকি থাকে অধিকাংশ মানুষকে করোনায় আক্রান্ত করানো। তবে সেটা বাংলাদেশে কতটুকু বাস্তবসম্মত?

অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ইমিউনিটি ৮০ ভাগের হয়েছে। ২০ ভাগের হয়নি। আমি ২০ ভাগের মধ্যে একজন। তবে আমার কাছে এসে আরেকজনের কাছে গেল, তার কাছ থেকেও আরেকজনের শরীরে কিন্তু তারা টিকতে পারলো না।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ৭০-৮০ ভাগ সংক্রমণের জন্য আমাদের যে ২০ হাজার সংক্রমণ আছে, এটা ১৫ কোটিতে উঠতে হবে। আর এটার যে পরিণতি তা ভয়াবহ।

তারা বলছেন, দেশে এটি করতে গেলে প্রায় ১৫-২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ যদি এই পথে হাঁটতে যায়, তাহলে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। এক হল দু’বছর বা ৩ বছরও সময় লাগতে পারে। এতে অনেক লোক আক্রান্ত হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ১০ থেকে ১২ কোটি আক্রান্ত হলে ১ শতাংশ মারা যাবে। কারণ আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো না।

তবে আপাতত বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘এটা হতে পারে মানুষ আক্রান্ত হয়ে এন্টিবডি তৈরি করা। এটা এখন আমরা নিজে থেকে করোনায় কাউকে আক্রান্ত করতে চাইবো? যদি কেউ আক্রান্ত হয় সেটা আলাদা কথা। তবে এরকম কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে সর্বশেষ (২৪ মে ২০২০) তথ্য অনুযায়ী দেশে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৫৩২ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৩ হাজার ৬১০ জনে। সুস্থ হয়েছে ৪১৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ৬ হাজার ৯০১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।’

আমাদের বাণী ডট কম/২৪ মে ২০২০/ডিডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।