দিনমজুর-রিকশাচালক, আইসক্রিম ও ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতার ছেলেমেয়েরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফটসহ মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে সরকারি চাকরি পেয়ে আবেকগাপ্লুত হয়ে পড়েন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানরা।

শনিবার রাতে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে মাইকে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার সময় চাকরিপ্রত্যাশীরা মা-বাবা ও স্বজন ছাড়াও নিয়োগ কর্তা পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। ৭১ জনের নাম ঘোষণার পর তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন। চাকরি পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামপুরের পূর্ব বাহাদুরপুর গ্রামের মিনারা জানান, তার বাবা মনোয়ার একজন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে ঝি-র কাজ করে। জামালপুর জেলার পুলিশ লাইন্সে যাতায়াতের খরচ পর্যন্ত তার কাছে ছিল না। তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে ২৫০ টাকা ধার করে এখানে এসেছেন। তার চাকরি পাওয়ার বিষয়টি তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না।

সরিষাবাড়ী উপজেলার হাবিবা জান্নাত বলেন, তার বাবা আ. সামাদ একজন দিনমজুর। অন্যের ক্ষেত-খামারে কাজ করে যা পায় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। তিনি গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন।

একই উপজেলার ডোয়াইল গ্রামের আফরোজা খাতুন বলেন, তার বাবা একজন রিকশাচালক। তার ইচ্ছা ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে একটি ব্যবসা ধরিয়ে দেওয়ার। আল্লাহ তার আশা পূরণ করেছে।

ওই উপজেলার করগ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নুরুজ্জামানের মেয়ে তাসরিন আক্তার বান্ধবীর সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। মাদারগঞ্জ উপজেলার ভ্রাম্যমাণ আইসক্রিম ও সবজি বিক্রেতা প্রাণতোষ বর্মণের মেয়ে ঋতু রানী জানান, আমার চাকরি পাওয়ার বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় জামালপুরে ৭১টি পদের বিপরীতে আবেদন করে ১ জুলাই প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেন দুই হাজার প্রার্থী। শারীরিক যোগ্যতায় প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকেন ৫২২ জন। ২ জুলাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৫ জন। একই দিন অনুষ্ঠিত হয় মৌখিক পরীক্ষা। এ থেকে চূড়ান্ত হয় ৭১ জন। তিন সদস্যের এ নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ছিলেন জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন পিপিএম বার ও বিপিএম। বোর্ডের সদস্য ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইশতিয়াক আহমেদ।

পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের আস্থা বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতে ও শততার সঙ্গে চাকরি দেওয়ার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।