ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জে খোর্দ্দ তালিয়ান গ্রামে ১৮ জন আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত (আর্সেনিকোসিস) হয়েছেন। তাদের মধ্যে হেলাল উদ্দীন নামে একজন মারা গেছেন। গ্রামবাসিদের ভাষ্য, গ্রামটিতে খাবার পানির জন্য সরকারিভাবে ৮টি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তারপরও সচেতনতার অভাবে গ্রামবসিদের অনেকে এখনো প্রতিনিয়ত এ আর্সেনিক বিষযুক্ত পানি পান করে চলেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলি অধিদফতরের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও জরিপ মতে, উপজেলায় ২৯ হাজার ৫’শ ৬৩ টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। ২৬ হাজার ৬’শ ১৩ টি আর্সেনিক দূষণমুক্ত। আর দূষনযুক্ত ২ হাজার ৯’শ ৫০ টি নলকূপ। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে কালীগঞ্জ উপজেলাতে ২৯ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করা হয়। যার মধ্যে উপজেলার জামাল ইউপির খর্দ্দতালিয়ান গ্রামে ছিল মাত্র একজন রোগী। গ্রামটিতে পানি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় ১১৯ টি খাবার পানির নলকূপের সব গুলোই আর্সেনিকযুক্ত। এরপর গ্রামটিতে সরকারিভাবে ৮ টি আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

২০০৯ সালে এনজিও ফোরামের উদ্যোগে আই সি বি এম পি প্রকল্পের আওতায় আর্সেনিক রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সে সময়ে ওই গ্রামের ১৮ জনকে আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। গত বছর আর্সেনিকে আক্রান্তে সারা শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মারা গেছেন হেলাল উদ্দীন। আর ইউসুফ মন্ডল এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

আক্রান্তদের একজন ইসলাম মন্ডল জানান, ২০০৬ সালের দিকে হঠাৎ একদিন দেখেন তার পিঠে, মাজার নিচে ও হাতের তালুতে চুলকাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথমে ভেবেছিলেন সাধারণ খোঁচ পাঁচড়া জাতীয় চুলকানী হতে পারে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে গ্রামের আরো অনেকের শরীরে একই ধরনের চুলকানি ছড়িয়ে পড়ে।

আব্দুল মজিদ মুন্সি জানান, অনেক আগেই তিনি চুলকানিতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমদিকে হাতের কনুতে অল্প অল্প চুলকানি দেখা দেয়। এখন সারা পিঠে ফোটাফোটা চুলকানিতে ভরে গেছে। নিরাময়ের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন। এখন চিন্তায় পড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জয়নাল মন্ডল জানান, সরকারিভাবে আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন জরুরি। বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে তাদের গ্রামে যে কয়টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। গ্রামটিতে ১৮ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত।

সরজমিনে দেখা গেছে গ্রামের অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্ম রোগ রয়েছে। ২ নম্বর জামাল ইউপির চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মন্ডল জানান, খোর্দ্দ তালিয়ান একটি অনুন্নত ও কৃষি নির্ভর গ্রাম। গ্রামের শতভাগ নলকূপে আর্সেনিক থাকায় কয়েকটি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ গ্রামটির পাশের নাটোপাড়া গ্রামের নলকূপেও ব্যাপকভাবে আর্সেনিক রয়েছে। নিরাপদ খাবার পানির জন্য আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের জন্য তিনি আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলি জেসমিন আরা জানান, ২০০৩ সালের জরিপে উপজেলাতে ১৬১ জন আর্সেনিকে আক্রান্তের মধ্যে জামাল ইউপিতে ১ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত ছিল।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীমা শারমিন লুবনা জানান, দীর্ঘদিন আর্সেনিক দূষনযুক্ত পানি পান করলে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে এবং আরোগ্য লাভে দীর্ঘ সময় লাগে।

তিনি জানান, নিরাপদ পানি পান, প্রচুর শাক সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। এ রোগ বংশগত বা ছোঁয়াচে নয়। এ রোগের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।