সারা দেশের ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষক আজ থেকে কর্ম বিরতিতে যাচ্ছেন। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। আজ প্রথম দিন (১৪ অক্টোবর) এক ঘণ্টা, পরের দিন (১৫ অক্টোবর) দুই ঘণ্টা, তারপর অর্থাৎ তৃতীয় দিন (১৬ অক্টোবর) অর্ধদিবস এবং শেষ দিন (১৭ অক্টোবর) পূর্ণ-দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

এ ছাড়া আগামী ২৩ অক্টোবর সারা দেশের সহকারী শিক্ষক বা ঢাকায় মহাসমাবেশ করবেন। সেখানে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে সহকারী শিক্ষকদের সব কয়টি সংগঠনের (১৪টি) সমন্বয়ে সদ্য গঠিত প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ নেতারা এ কথা বলেন। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে কর্মসূচি পালিত হবে। পরিষদের মুখপাত্র রবিউল হাসান দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ঐক্য পরিষদ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভবে পালনের আহ্বান জানান।

এ দিকে আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। সমাপনী পরীক্ষার মাত্র ৩০ দিন আগে সহকারী শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মসূচিকে ঘিরে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঐক্য পরিষদ সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ৬ বছর ধরে আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি জানিয়ে আসছি। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক সচিব ও ডিপিইর মহাপরিচালকরা দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ার পরও তা কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, আজই সরকারের মদ্য থেকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন প্রধান শিক্ষকদের বেতনের এক ধাপ নিচে প্রদানের ঘোষণা ও আদেশ দিলেই আমরা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্লাস রুমে ফিরে যাবো।

প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের একাধিক নেতা এবং পৃথকভাবে পরিষদের মুখপাত্র রবিউল হাসান জানান, সারা দেশের সব জেলায় জেলায় সহকারী শিক্ষক নেতাদের এরই মধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে, ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে সহকারী শিক্ষকদের আজ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মবিরতির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কোন কোন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সহকারী শিক্ষক নেতাদের শ্রেণী কক্ষে পাঠদান এবং আসন্ন সমাপনী পরীক্ষার বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

কর্মবিরতির যৌক্তিকতা ও দাবি সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে বৈষম্য বিরাজ করছে। বিশেষ করে সরকারি অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীদের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন স্কেলের ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিপিএড কোর্স সম্পন্ন করা একজন প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক ১২তম গ্রেডে একজন সহকারী শিক্ষক ১৫তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ অন্যান্য সরকারি বিভাগের চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের তুলনায় কয়েক গ্রেড উপরের স্কেলে বেতন পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকারের অন্য বিভাগের সাথেই নয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও পদ মর্যাদাগত বৈষম্য বিরাজ করছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতনভাতা পাচ্ছেন। আর সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৪তম গ্রেডে। ১৬ বছর চাকরির পর একজন প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকের বেতনভাতার ব্যবধান হবে ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে একজন প্রধান শিক্ষক যে স্কেলে চাকরি শুরু করেন একজন সহকারী শিক্ষক ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সে স্কেলেরও একধাপ নিচে চাকরি শেষ করেন, যা সহকারী শিক্ষক ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের জন্য চরম বৈষম্যের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।