কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলারর হারবাংয়ে স্কুলছাত্রী ও বিধবা নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হারবাং ইছাছড়ি হায়দারঘোনা গ্রামে এ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান বিচারের আশ্বাস দিয়ে ধামাচাপা দেয়ায় বিষয়টি এতদিন গোপন থাকে।

জানা যায়, বুধবার রাতে হারবাং ইউনিয়নে স্কুলছাত্রীসহ দুই নারী গণধর্ষনের শিকার হওয়ার বিষয়টি শনিবার সকালে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। পরে পুলিশ ওই এলাকায় বখাটেদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। এদিকে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে বৃহস্পতিবার সকালে তার স্বজনরা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ানষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসিতে) প্রেরণ করে। বর্তমানে স্কুলছাত্রটি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বখাটেদের হাতে ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আজিজনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীরা এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও শিক্ষক- অভিভাবকরা অংশ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে বখাটেদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানায়।

গণধর্ষনের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর ভাই বলেন, চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হারবাং ইছাছড়ি হায়দারঘোনা এলাকায় পাশাপাশি দুইটি বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িঘর নেই। তারমধ্যে একটি বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা ভাইবোনসহ আমরা থাকি এবং অপর বাড়িতে এক বিধবা নারী (৩৬) তার সন্তান নিয়ে থাকেন। গত ১৭ জুলাই পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা ওই বিধবা নারীর সন্তান অন্যত্র বেড়াতে যাওয়ায় তিনি একা হয়ে পড়েন। পরে রাতের বেলায় আমার বাবা-মাকে বুঝিয়ে তার সাথে থাকার জন্য আমার স্কুল পড়ুয়া ছোটবোনকে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়িতে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া আর কেউ ছিলনা। এদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় ছাবের আহমদের ছেলে মো আসিফ এর নেতৃত্তে ৫-৬ জন স্থানীয় বখাটে আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার স্কুল পড়ুয়া ছোট বোনকে খুঁজতে থাকে। এসময় বখাটেরা আমার ছোট বোনের সন্ধান দেয়ার জন্য বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর শুরু করলে তাদের চিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা বিধবা নারীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে তিনি দরজা খুলে আমাদের বাড়ির দিকে আসতে চাইলে তিনজন বখাটে ওই বাড়িতে ঢুকে আমার ছোট বোনকে পার্শ্ববর্তী একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা আমার ছোট বোনকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এসময় ওই নারী তাদের বাঁধা দিলে অপর বখাটেরা তাকেও গণধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে বিচারের আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। বুধবার রাতে হারবাং ইউনিয়নে স্কুলছাত্রীসহ দুই নারী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি শনিবার সকালে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পিছু হটে ইউপি চেয়ারম্যান।

তবে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, বখাটেদের দ্বারা স্কুলছাত্রীসহ দুই নারী গণধর্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক। এই গণধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ শনিবার বিকাল থেকে অভিযান চালালেও বখাটে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম চৌধূরী বলেন, হারবাংয়ে স্কুলছাত্রীসহ দুই নারী গণধর্ষণের ঘটনায় থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি স্থানীয়দের সূত্রে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বখাটেদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।